গ্রিনকার্ড প্রদান ৫০ ভাগ কমিয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র!
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী সম্প্রদায় (গ্রিনকার্ড ধারী) আর নাগরিকদের মধ্যকার বিভাজন সামনে এনেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভেঙে পড়া আর দূর্বল অভিভাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে কিছু কিছু পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন তার কিছু অংশ বহাল থাকলেও অধিকাংশ আদালতের রায়ে স্থগিত আছে অথবা কার্যকারীতা নেই। এবার তিনি এবং তার প্রশাসন নতুন একটি অধ্যদেশ কে সামনে আনতে চাইছেন যার মাধ্যমে গ্রিনকার্ড প্রত্যাশীদেরকে অন্য অনেক বিবেচনার সাথে বাধ্যতামূলক ইংরেজিতে দক্ষতা দেখাতে হবে। এখন থেকে নানান যে সবব ক্যাটাগরীর ভিত্তিকে গ্রিনকার্ড ইস্যু করা হতো সেগুলো বলবৎ রাখার সাথে সাথে ইংরেজিতে অবস্যই আইইএলটিস বা টোফেল এর মত পরিক্ষায় পাস করার স্কোর দেখাতে হবে।
“রেইজ এ্যাক্ট, ভবিষ্যতে, আমেরিকানদের দরিদ্রের হার কমাবে, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করবে। এজন্যই যে, এই এ্যাক্টের মাধ্যমে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অন্যন্য দেশের নাগরিকদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিচ্ছিল সেটা পরিবর্তন হবে। অনেক দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্র খুব দূর্বল একটি অভিবাসন নীতি নিয়ে আগিয়েছে এবং এখনও আগাচ্ছে।সেটার অধিনে খুব কম যোগ্যতা সম্পন্ন অভিবাসীদেরকে রেকর্ড সংখ্যক গ্রিনকার্ড দিয়েছে।এই বিধান, আমেরিকার মূল ধারার জনগোষ্টী, সম্প্রদায় ভিত্তিক যে বরাদ্দ এবং ট্যাক্সপ্রদানকারীদের অনেচ চাপে রেখেছে। একই সাথে এই বিধানের কারণে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এমন অনেককেই গ্রিনকার্ড দেয়া হয়েছে যাদের কারনে ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্টির অনেকেই এ্সব গ্রিনকার্ডধারীদের সাথে প্রতিযোগীতায় না পেরে চাকুরী হারিয়েছেন। এখন থেকে, এই রেইজ এ্যাক্টের মাধ্যমে প্রচলিত নিয়ম পরিবর্তন হয়ে যাবে, এবং গ্রিনকার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে পয়েন্ট সিন্টেম প্রবর্তন করা হবে।” -বলছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নতুন এই অভিবাসন সংক্রান্ত বিলটি গত ফ্রেব্রুয়ারী মাসে উথ্বাপন করা হয়। আরকানসাস এবং জর্জিয়ার ২ জন সিনেটর এই বিল নিয়ে কাজ করেছেন এতদিন। রিফরমিং আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফর স্ট্রং এমপ্লোয়মেন্ট (Reforming American Immigration for Strong Employment) নামক এই এ্যাক্টে অভিবাসী হতে চান যারা তাদের শক্ত অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড, আমেরিকার ভান্ডারে ট্যাক্স প্রদান করার ক্ষমতা অথবা তারা কর্মসংস্থান করতে পারবেন সেই দক্ষতা দেখাতে হবে। এবং তারা যেন গ্রিনকার্ড নিয়ে সরকারী ওয়েলফেয়ার বা জনকল্যানমূলক যেসব সুবিধা আছে সেগুলি ভোগ না করতে পারেন সে বিষয়ে বিধির উল্লেখ আছে। ‘এই প্রতিযোগীতামূলক বিধি বিধানে কেবল ঐসব মানুষেরাই গ্রিনকার্ড পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন যারা ভাল ইংরেজি জানে, অর্থনৈতিক ভাবে তারা নিজেদেরকে চালিয়ে নিতে পারেন এমন সামর্থবান শুধু নয়, তারা যেন ট্যাক্স প্রদান করার মত আয় রোজগার করতে পারে, এবং আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখতে পারে এমন সব যোগ্যতা দেখাতে হবে।এই রেইজ এ্যাক্ট নতুন অভিবাসীদের ওয়েলফেয়ার সুবিধা নিতে বাধা দেবে, এবং আ্মেরিকান শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় তার রক্ষক হিসেবে কাজ করবে।’- হো্য়াইট হাউসে যে দুই জন সিনেটের এই বিল নিয়ে কাজ করছেন তাদের সাথে নিয়ে বলছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যদিও, ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের করা ওয়েলফেরার এ্যাক্ট এ কোন নতুন অভিবাসী অবস্য ৫ বছরের মধ্যে অথবা আরো বেশি সময় ধরে ওয়েলফেয়ার সুবিধা নিতে পারছেন না। হোমল্যান্ড সিকিউরিট দপ্তরের আনুষ্ঠানিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্থায়ী অনুমতি পেয়েছেন ১০ লক্ষ ৫৩ হাজার বিদেশী নাগরিক। গড়ে এটা বছরে এক মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ নতুন গ্রিনকার্ড ইস্যু করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেটা ৫ লক্ষে কমিয়ে আনার জন্যেই এই নিয়ম বলে খোলাসা করেই জানিয়েছেন এই বিল নিয়ে কাজ করছে এমন ২ জন সিনেটরের একজন, জর্জিয়ার ডেভিড পারডু’ বলছিলেন, বর্তমানে প্রতি ১৫ জন নতুন গ্রিনকার্ডধারীর মাত্র ১ জন উচ্চ শিক্ষিত। তারা নিজের পায়ে দাড়ানোর সক্ষমতা আছে। আমাদের এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে।এটা করতে গিয়ে আমরা অন্যন্য দেশের অভিবাসন নীতিমালা পর্যালোচনা করেছি। অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার অভিবাসন মডেল-ই বিশ্বের সেরা। তারা তাদের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পেরেছে সারা বিশ্ব থেকে যোগ্যদের বসবাসের সুযোগ করে দিতে পারছে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, আমরা এমন ধরনের অভিবাসী চাই যারা আমেরিকানদের বোঝা না হয়, এবং তারা নিজেরা ভালো করার মাধ্যমে তাদের নিজেদের এবং আমেরিকার অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে পারে’ । আরেকজন সিনেটর আরকানসাস এর টম কটন বলছেন, এতদিন ধরে আমরা অধিক প্রযুক্তি জ্ঞান আছে, অথবা উদ্ভাবনী ব্যাবসায়িক চিন্তা আছে এমন অভিবাসীদের পথ রুদ্ধ করে রেখেছি। সেটা উন্মক্ত করা হবে। সাধারন অভিবাসীদের গুরুত্ব না দিয়ে ঐ ধরনের উচ্চ শিক্ষিত এবং উদ্ভাবনী শক্তি আছে এমন মানুষদেরকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। অবস্য এই নতুন বিল নিয়ে এখনই নানা রকম আলোচনা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এই বিল সিনেটে পাশ হবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। ফেব্রুয়ারীতে বিলটি যখন প্রথম আলোচনায় নিয়ে আসা হয় তখনই অনেক রিপাবলিকান সিনেটর এটা বিপক্ষে অবস্থান নেন। এবারে সিনেটে শুনানীর মাধ্যমে সেটি পাশ হলেই কেবল আইনে পরিনত হবে। তবে, নতুন বিল নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ মত থাকলেও আমেরিকার অভিবাসন এবং গ্রিনকার্ড প্রদানের নিয়ম যে সময়ের সাথে সাজুয্যপূর্ণ নয় সেটা নিয়ে একমত ডেমোক্রাট বা রিপাবলিকান দলের প্রায় অধিকাংশ আইনপ্রনেতা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন