ঘাটতি নেই, তবু বাড়ছে এলপি গ্যাসের দাম
সারা দেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মূলত রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপি (লিকুইডিফায়েড পেট্রোলিয়াম) গ্যাসের দাম বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে এই দাম বাড়তে শুরু করে। চলতি মাসে সাড়ে ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডারে এই বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অঞ্চলভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
গত আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশের অনেক স্থানে যে সিলিন্ডার ৯০০ টাকায় পাওয়া যেত, চলতি মাসে তা কোথাও কোথাও ১ হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে দেশের কোথাও এলপি গ্যাসের ঘাটতি নেই। চাইলেই সিলিন্ডার কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দুই মাস ধরে দাম বৃদ্ধির কারণেই দেশেও এর দাম বেড়েছে। দেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ এলপি গ্যাস আমদানি করা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। তবে তাতে দেশে সিলিন্ডারপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বাড়ার কথা নয়। এই দাম বাড়ার আগে সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ৭০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। এখন আবার তার ওপর দাম বাড়ানো হচ্ছে।
দুই বছর ধরে (২০১৫ ও ২০১৬ সাল) আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেনের দাম কমেই ছিল। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে দাম বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। গত দুই মাসে প্রতি মেট্রিক টনে তা গড়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা (২০০ মার্কিন ডলার) বেড়েছে বলে কোম্পানিগুলোর সূত্র জানায়।
সরকার এলপি গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক আগে থেকেই দাম নিয়ন্ত্রণের কথাও বলে এসেছে। সেই লক্ষ্যে এলপি গ্যাসের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণের জন্য প্রায় এক বছর আগে সরকার একটি কমিটিও গঠন করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই কমিটির কোনো সুপারিশ পাওয়া যায়নি। আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম প্রতি মাসে নির্ধারণ হওয়ায় দেশের বাজারে স্থায়ী কোনো খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন।
এ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নসরুল হামিদ বলেন, বারবার তাগাদা দিয়েও কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এটা দুঃখজনক। আর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মাসে দাম নির্ধারণের যে পদ্ধতি চালু আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা মোটেই কঠিন কিছু নয়। দাম নির্ধারণের এই বিষয়টি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে দিয়ে দিলেও এটা করা সম্ভব হবে।
খুলনা, ময়মনসিংহ, পাবনা থেকে আমাদের স্থানীয় অফিস ও প্রতিনিধিরা জানান, এ বছরের শুরু থেকে দফায় দফায় এলপি গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রতি সিলিন্ডারে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে ১২ কেজির প্রতিটি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। বছরের শুরুতে এসব জায়গায় সিলিন্ডার বিক্রি হতো ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ শহর ও শহরতলির কয়েকটি খুচরা দোকানে ৩০ কেজির সিলিন্ডার ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এটি ছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা।
খুলনা এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শেখ মো. তোবারেক হোসেন বলেন, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কোনো ঘোষণা ছাড়াই ওমেরা ও টোটালগ্যাজ সিলিন্ডারপ্রতি ৫০ টাকা করে দাম বাড়ায়। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই দুটি কোম্পানি আগের দামের সঙ্গে আরও ৯০ টাকা বাড়ায়। এ সময় ক্লিনহিট, যমুনা ও বিএম এনার্জি দাম বাড়ায় ৯০ টাকা করে। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবার গ্যাসের দাম বাড়ে কোম্পানিভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। আর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবার ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
দেশে এলপি গ্যাস আমদানি করা হয় সৌদি অ্যারামকো নামের একটি কোম্পানি থেকে। এই কোম্পানি প্রতি মাসের ১ তারিখে সেই মাসের জন্য প্রোপেন ও বিউটেনের দাম প্রকাশ করে। সেই মাসে ওই দামই নির্ধারিত থাকে। বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে সাধারণত দুবার আমদানি করে।
প্রতিবছর দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৩ সালে দেশের বাজারে এলপি গ্যাসের সরবরাহ ছিল ১ লাখ টন। এ বছর তা ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ১১টি কোম্পানি এলপি গ্যাস বাজারজাত করার কাজে নিয়োজিত আছে। আরও চার-পাঁচটি কোম্পানি কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দাম বাড়ার ঝুঁকি সব সময় থাকে। তবে সরকার বিধিবিধান করে এটা নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেট) করতে পারে, যেমন ভারত করছে।
অধ্যাপক তামিম বলেন, দেশে এলপি গ্যাস খাত যেহেতু অনেক বড় হচ্ছে সেহেতু এই খাতের জন্য কিছু বিধিবিধান (রেগুলেশন) দরকার। দাম, শুল্ক ও কর, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয় সংযুক্ত করে এই রেগুলেশন করতে হবে।সূত্র : প্রথম আলো
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন