ঘাস আর বালু খেয়ে রোজা রাখছেন তাঁরা
কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে জীবন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে যেতে হবে ইরাকের মসুল শহরে। জঙ্গিবাদের নির্মমতা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা উপলব্ধি করা যাবে সেখানকার সাধারণ মানুষের করুণ জীবন দেখলে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে উৎসবের মাস রমজানেও নাকি শুধু ঘাস আর বালু খেয়ে থাকছেন তাঁরা। মসুল শহরের এক বাসিন্দার বর্ণনায় ফুটে উঠেছে করুণ এই চিত্র।
মসুল শহরে ঘাঁটি গেড়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ‘সুখী করতে’ ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ গড়ার স্বপ্ন তাদের। স্বপ্ন পূরণে মাঠে নেমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় মসুল শহরের কিছু অংশ। ইসলামের এই স্বঘোষিত রক্ষাকর্তাদের শাসনে কেমন আছেন সেখানকার বাসিন্দারা, তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
চলছে রমজান মাস। মসুলে রমজান কেমন, তাঁর উত্তর মিলবে উম্মে মুহাম্মদ নামের এক নারীর মুখেই। ইফতার কী, তা ভুলেই গেছেন তিনি। উম্মে মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা যা পাই, তা খেয়েই রোজা ভাঙি। প্রায়ই পানিতে বালু ও পোকা পাওয়া যায়।’
‘আমাদের গাড়ি-বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের পরিবার আলাদা হয়ে গেছে। আমরা একটি ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু এখন সব তলানিতে এসে ঠেকেছে।’
কয়েকটি সংস্থা মসুলে ত্রাণ বিতরণ করে। সেখানে থাকে চাল, দুধ, চিনি, টমেটোর রস ও পনির।
তবে সেদিনের ত্রাণ জোটেনি মসুলের আরেক বাসিন্দা উম্মে ইউসুফের কপালে। তাই মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। উম্মে ইউসুফ বলেন, ‘আমার ১০ সন্তান রয়েছে। ইফতারে আমরা শুধু পানি আর টমেটোর রস পান করি।’ উম্মে ইউসুফ জানান, তাঁর মেয়েও এই শহরের এক প্রত্যন্ত এলাকায় থাকেন। সেখানে খাবার বলতে আছে শুধু ঘাস আর বালু।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ দিলান নামের এক স্বেচ্ছাসেবী জানান, গত সপ্তাহের প্রায় দুই হাজার ত্রাণের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে মসুল শহরে। সবচেয়ে অভাবী পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণের চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী এসব খাবারের অর্থ দিয়ে থাকেন।
২০১৪ সালের জুন মাস থেকেই আইএসের দখলে রয়েছে মসুল। সেই থেকে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। গত বছর অক্টোবরে সেখানে অভিযান শুরু করে ইরাকি সরকারি বাহিনী। এরপর পরিস্থিতি আরো সংকটজনক হয়। খাবারের অভাব, নিরাপত্তা ও জীবনের ভয়ে শহর ছাড়ে মসুলের আট লাখ বাসিন্দা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন