ঘুষ না দেয়ায় ৩৫ হাজার ডিম নষ্ট, ৬ পুলিশ প্রত্যাহার

২০ হাজার টাকা ঘুষ না পাওয়ায় নাটোরের বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক ৩৫ হাজার পিস মুরগির ডিম নষ্ট করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনায় সম্পৃক্ত ৬ পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিক ক্লোজ করে হাইওয়ে বগুড়া রিজিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ১৬ মে ‘ঘুষ না দেয়ায় ৩৫ হাজার ডিম রাস্তায় ফেলে নষ্ট করল পুলিশ’ শিরোনামের সংবাদ পুলিশ সদরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরপরই ডিমের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।
ডিমের মালিক শ্রী বিপ্লব কুমার সাহা (৩৫) বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার বরাবর যে অভিযোগ করেছেন তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ ও প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা অনুসন্ধানে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহকে প্রধান করে শুক্রবার এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয় পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজ করে হাইওয়ে বগুড়া রিজিয়ন সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সোহেল রানা।
উল্লেখ্য, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ঘুষ না দেয়ায় রশি কেটে পিকআপে থাকা পৌনে তিন লাখ টাকার ডিম রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে দেয় বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ। এতে প্রায় সব ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ভোরে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আগ্রান সুতিরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ডিমের মালিক বিপ্লব কুমার সাহার পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ভোর রাতে একটি পিকআপ ৩৫ হাজার ১০০ ডিম নিয়ে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থেকে নাটোরে যাচ্ছিল। বড়াইগ্রাম উপজেলার আগ্রান সুতিরপাড় এলাকায় পিকআপটির চাকা পাংচার হয়ে গেলে পাশের ফিডার রোডে নেমে যায়।
খবর পেয়ে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা পিকআপ উদ্ধারের জন্য রেকার ভাড়াসহ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। চালক এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্যরা পিকআপে ডিমের খাঁচি বাঁধার রশি চাকু দিয়ে কেটে দেয়। এতে ডিমের খাঁচি রাস্তায় পড়ে সব ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা ১১টায় সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় নারীরা রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙাচোরা ডিম কুড়িয়ে নিচ্ছেন। রাস্তাজুড়ে ভাঙা ডিমের হলুদ কুসুম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ট্রাকের চালক-হেলপার ভাঙা ডিম ও প্লাস্টিকের খাঁচিগুলা সংগ্রহ করছেন। কেটে ফেলা রশিগুলা রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় পুকুরের পাহারাদার শহীদুল ইসলাম ও আতাহার আলী জানান, চালক-হেলপার বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও পিকআপের রশিগুলা কেটে দিয়েছে পুলিশ। রশি না কাটলে ডিমগুলা নষ্ট হতো না। ডিমসহ পিকআপটি রেকার দিয়ে থানায় নিয়ে গেলে এমন কি ক্ষতি হতো পুলিশের।
ডিমের মালিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল গ্রামের মেসার্স প্রীতিমণি এন্টারপ্রাইজের মালিক বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, আমি চালকের মোবাইল দিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। রশি না কাটার জন্য হাতে-পায়ে ধরে পুলিশকে অনুরোধ করেছি। তারা আমার কোনো কথাই শোনেনি। সবগুলো ডিম নষ্ট হয়ে গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















