ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৭ বছর, এখনো দুঃস্বপ্ন দেখেন উপকূলবাসী

আজ সেই প্রলয়ঙ্করী ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের ওই রাতে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরের’ আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ, গবাদি পশু ও বন্যপ্রাণীর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। নিখোঁজ হয় বহু মানুষ।

দুর্যোগের আগের দিনও যে জনপদ ছিল মানুষের কোলাহলে মুখরিত, প্রাণচাঞ্চল্য ছিল শিশু কিশোরদের। মাঠজুড়ে ছিল কাঁচা-পাকা সোনালি ধানের সমারোহ, পর দিনই সেই জনপদ পরিণত হয় মৃতের ভাগাড়ে। ১৭ বছর পর সেই স্মৃতি নিয়ে এখনো সেখানকার মানুষ বেঁচে আছেন। তাদের অধিকাংশই হারিয়েছেন স্বজন।

সেই বিভীষিকাময় দিনটি মনে পড়লেই এখনো আঁতকে ওঠেন তারা। উপকূলের মানুষের স্মৃতিতে এখনো ভেসে ওঠে শত শত মানুষের চিৎকার আর স্বজনদের আহাজারি।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলাতেই প্রাণ হারায় ১১০০ উপর মানুষ। এরমধ্যে সাউথখালী ইউনিয়নেই ৮ শতাধিক মানুষ মারা যায়। পাশাপাশি বিধ্বস্ত হয় হাজার-হাজার ঘরবাড়ি, মারা যায় লক্ষাধিক গবাদি পশু। উপড়ে যায় অসংখ্য গাছপালা। বিরান ভূমিতে পরিনত হয় শরণখোলা। ঝড়- জলোচ্ছ্বাসের মৃত্যুকূপ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি পায় বাগেরহাটের সাউথখালী ইউনিয়ন। আজও এই এলাকার মানুষ সিডরের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।

এখনো ঘূর্ণিঝড় ধেঁয়ে আসার খবরে আতংকিত হয়ে পড়ে এই জনপদের মানুষ। বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপালসহ উপকূলীয় সিডর বিধ্বস্ত জেলাগুলোর মানুষ আজ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো স্বজনদের স্বরণে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও স্বরণসভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করছে।

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরই নয়, গত ৫০ বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ৬০টি ঘূর্ণিঝড়ের ৩৬টিই দেশের উপকূলে আঘাত হানে। ব্যাপক প্রাণহানীসহ লন্ডভন্ড করেছে উপকূলীয় জনপদ। সিডরে ব্যাপক প্রাণহানীর পর ২০১৬ সালে সরকার বাগেরহাটের শরণখোলায় লোকজনের প্রাণহানী থেকে রক্ষায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩ কিলোমিটার টেকসইবাঁধ নির্মাণ শেষ হয়।

২৫ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় এলাকার লোকজন এখন বলেশ্বর নদ শাষন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে।
সম্প্রতি উপকূলের বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। নদী শাসন ছাড়া শুধু বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করে ভাঙনের প্রতিকার মিলবে না বলে দাবি স্থানীয়দের। এসব বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত সুইস গেট নির্মাণ না করে অপরিকল্পিতভাবে ছোট এবং অল্প গেট নির্মাণের কারণে বৃষ্টি বা জোয়ারের পানি নিষ্কাশন হয় না ঠিকমতো। ফলে দিনের পর দিন পানিবন্দি থাকতে হয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয়রা জানান, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়তে হয় তাদের। পানি নামার ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে ৭ দিন পানিবন্দি ছিল উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত ছিল আমনের বীজতলা। এক সপ্তাহ পরেও পানি না নামায়, বাঁধ কেটে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা।নদী শাসন না করেই বাঁধ নির্মাণ হওয়াতে বড় কোনো দুর্যোগে আবারও স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা সংকটে ফেলবে বলে মনে করেন স্থানিয়রা।