চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মৎস্য প্রকল্পে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় জেগে উঠা চরাঞ্চলে ৮০’র দশকে গড়ে উঠা মৎস্য শিল্প কয়েকদশকে দেশের বৃহত্তম মৎস্য প্রকল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানের পর এই মৎস্য প্রকল্পের সাথে জড়িত চাষিরা অব্যাহত হুমকি, দখল, চাঁদাবাজির শিকার হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। তাই মৎস্য প্রকল্প রক্ষা ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য প্রকল্প মালিক ও এলাকাবাসি মানববন্ধন করেছে। সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে মুহুরী প্রজেক্ট বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচীতে শতাধিক মৎস্য প্রকল্প মালিক ও মৎস্য প্রকল্পে জীবিকা নির্বাহকারী নারী-পুরুষ অংশ নেন।
জানা যায়, মুহুরী প্রকল্প দেশের বৃহত্তম মৎস্য প্রকল্প। এই প্রকল্পটি মৎস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্য চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের মাছের চাহিদাও পূরণ করছে। এখানকার প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে মাছ চাষ করা হয়। বছরে প্রায় ৪২ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয় যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ১৯৮০’র দশকে সরকার উপক‚লীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ করলে জেগে উঠা চরাঞ্চলে স্থানিয়দের উদ্যোগে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার একর মৎস্য প্রকল্প গড়ে উঠে।
মৎস্য প্রকল্প মালিক নুরুল আবছার জসিম বলেন, ‘এক বছর আগে বন্যার ক্ষত এখনো মাছ চাষিরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার উপর চাঁদা এবং মৎস্য প্রকল্প দখলের হুমকি আমাদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে। কিছু চিহ্নিত দখলবাজ ও চাঁদাবাজ চক্র বৈধ প্রকল্পের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে। আমরা ব্যাংক লোন ও বকেয়া খাদ্য নিয়ে মৎস্য প্রকল্পে বিনিয়োগ করি। এখন যদি চাঁদাবাজদের কারণে মৎস্য প্রকল্পের ক্ষতিসাধন হয় তাহলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ১৭ জুলাই আমাদের মৎস্য প্রকল্পে ৪০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী সেলিম, দিদার, ইমরান ও জসিমসহ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকল্পের খাদ্য সংরক্ষণ ঘর পুড়িয়ে দেয়, মাছ লুটের চেষ্টা করে এবং কর্মচারীদের মারধর করে। এদের মধ্যে দিদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি হামলাকারিদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং চাষিদের জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে। চাষিরা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ইজারা নিয়ে বৈধভাবে চাষ করলেও একটি মহল মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ওইসব জমিকে খাস জমি দাবি করে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।’
মৎস্য প্রকল্প মালিক শেখ মোহাম্মদ আবরার বলেন, ‘মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় বৈধভাবে গড়ে ওঠা সব মৎস্য প্রকল্প রক্ষায় এখনি প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। এছাড়া হামলাকারী, দখলবাজ, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা সেনা ক্যাম্প, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জোরারগঞ্জ থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা সন্ত্রাসি ও চাঁদাবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

মৎস্য চাষে সম্পৃক্ত আবদুস সালাম ফোরকান ও আহাদুজ্জামান ওহি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্প মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি আমরা চাই প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের দ্রæত আইনের আওতায় আনবে এবং মৎস্য চাষিদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই মৎস্য চাষের কারণে শত শত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করছে।