চতুর্থ দিনেও কমলাপুরে টিকিটের জন্য হাহাকার

ঈদের আগে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় চতুর্থ দিনেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটপ্রতাশীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন তারা।

সোমবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সকাল ৮টার দিকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।

স্বপ্নের টিকিট পেতে রোববার মধ্যরাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। ভোর হতে না হতেই লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। সকাল ৬টার দিকে লাইনে মানুষের সংখ্যা নির্ধারিত টিকিটের তুলনায় প্রায় ২-৩ গুণ বেড়ে যায়। ফলে অনেক যাত্রী হতাশ হয়েই ফিরেছেন।

আজ সরেজমিন কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, অগ্রিম টিকিট কাটতে আসা যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়।

কাউন্টারের সামনে বসেই সেহরি সেরেছেন তারা। টিকিট পাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মধ্যরাতে এসে যারা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, তারাই শুধু কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাচ্ছেন। সকালের দিকে আসা অধিকাংশ লোকই টিকিট কাটতে পারছেন না।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলছে। অধিকাংশ ট্রেনের টিকিট ছাড়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এদিকে আজ ১৩ জুনের অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে।

পাভেল নামে এক টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, সেহরি খেয়েই কমলাপুরের দিকে রওনা হয়েছি। গতকালও এসেছিলাম কিন্তু টিকেট পাইনি। তাই আজ ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি, আশা করছি টিকিট পাব।

রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের বিশেষ নির্দেশনায় এবার ঢাকা-কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনকে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-খুলনা রুটে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ থেকে ৬ জুন পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।

রেলপথমন্ত্রী জানান, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

১৭৫টি অতিরিক্ত যাত্রীবাহী বগিসহ ১৮টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন এবারের ঈদে চালানো হবে। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল চালু হওয়া ঢাকা-কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতি ঈদে তিন দিন বন্ধ রাখা হয়।

এবার খুলনাবাসীর জন্য ঈদ উপলক্ষে এ ট্রেনটি তার বিশেষ উপহার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১৩-১৫ জুন পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঈদযাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেনে কোনো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হবে না। অত্যন্ত নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ট্রেনটি চালানো হবে।

রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মিল্লাত আহম্মেদ চৌধুরী জানান, বৃদ্ধ মা-বাবা, বোনসহ পরিবারের সাতজন গ্রামে যাবেন ঈদ করতে। শুক্রবার ইফতার করেই তিনি লাইনে দাঁড়ান। রাতে ৩টি মশার কয়েল জ্বালিয়েছেন, সেহরি খেয়েছেন লাইনে বসেই। ডাবল কেবিন চেয়ে না পাওয়ায় একটি সিঙ্গেল কেবিন নিয়েছেন।

এদিকে সুবর্ণা এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, সিল্কসিটি, মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসসহ আরও বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এ সময় লাইনে শত শত লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন।

তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী হারুন-অর-রশিদ জানান, তিনি সকালের দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। টিকিট কাটতে পারেননি। বেলা ১১টার দিকে মাইকে ঘোষণা হয় এ ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, অগ্রিম টিকিট বিক্রয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রুটি নেই। অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিট নিতে আসা যাত্রীদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সীমিত টিকিট বিক্রি করছে।