চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণায় আকর্ষণ বাড়াতে হবে

ঔষধ শিল্প খাতে ২০৩৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেধাস্বত্বে ছাড় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে পরবর্তী ১৭ বছরের জন্য মেধাস্বত্বের জন্য কোন ব্যয় না করে ঔষধ তৈরি ও কেনাবেচা করতে পারবে। এই সময়ের পর যদি এই ছাড় না থাকে এবং আমরা যদি নিজেদের পেটেন্ট করতে না পারি, এবং ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল তৈরি করতে না পারি, তবে ঔষধের দাম ২৫ থেকে ৩০ গুন বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থাৎ ২০৩২ সালে মেধাস্বত্ব ছাড়ে একটি ওষুধের দাম যদি ১০০ টাকা হয় তবে ২০৩৩ সালে মেধাস্বত্ব ছাড় উঠে গেলে সেটির দাম হবে প্রায় ৩০০০ টাকা। কাজেই এ ধরনের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের এখন থেকেই গবেষণায় বেশি বেশি মননিবেশ করতে হবে এবং নিজেদের পেটেন্ট ও নিজেদের কাঁচামাল তৈরি করতে হবে। এর জন্য উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্তভাবে বাড়াতে হবে।

কিন্তু বর্তমানে আমরা যে পথে হাঁটছি তা মোটেও সুখকর হবে বলে মনে হচ্ছে না। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। মেধাবীদেরকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দিকে আকৃষ্ট না করে শুধু সেবক বানানোর দিকে বেশি নজর আমাদের। ভারত এবং চীনে যখন মেধাবীদেরকে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, সেখানে আমরা তা করতে পারছি কি? উপরন্ত সেবক শ্রেণীতে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সুবিধা কমানোর দিকে বেশি নজর আমাদের।

গবেষকগণকে গবেষণার চিন্তার পরিবর্তে তার পিএইচডির বেতন বৃদ্ধির চিন্তা, পেনশনের চিন্তা ইত্যাদির দিকে আমরা ঠেলে দিচ্ছি। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নিয়োজিত মানুষ গড়ার কারিগরদেরকে নিয়ে আমরা নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করছি। একবার তাঁদের বেতন স্কেল কমিয়ে নিচে নামিয়ে দিচ্ছি, আবার তাঁদের উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দিচ্ছি অথবা পরবর্তীতে চালু হলেও তা ২০২২ সাল থেকে (যদিও অন্য সবার জন্য তা ২০১৫ সাল থেকে চালু হয়েছে), আবার এক অনিশ্চিত পেনশন ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছি।

শুধু এক বিশেষ সেবক শ্রেণীর দিকে লোভনীয় সুবিধা দিলেই দেশ এগুবে না, বরং যারা জ্ঞান তৈরি করেন তাদের দিকে অর্থাৎ জ্ঞান সৃষ্টির জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বেশি নজর দিতে হবে, এই সেক্টরে মেধাবীদেরকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আকৃষ্ট করতে হবে। কারণ নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ছাড়া 4IR এর (Fourth Industrial Revolution) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়বো। মনে রাখতে হবে উদ্ভাবন বা তৈরীর চিন্তা বাদ দিয়ে শুধুই চাকচিক্যময় বিপণন ব্যবস্থার চিন্তা করা একটি হতদরিদ্র চিন্তা।

অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান, চেয়ারম্যান, রসায়ন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।