চব্বিশ বছর যাবত বীজ উৎপাদন বন্ধ নেত্রকোনার দুর্গাপুর মৎস্য খামারে

নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি মৎস্যবীজ(রেণু) উৎপাদন খামারটি প্রায় দুই যুগ ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। পানি সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে রেণু উৎপাদন কার্যক্রম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় মৎস্যচাষীরা তেমনি দীর্ঘ দিন ধরে এভাবেই পড়ে থাকায় ধংশ হয়েযাচ্ছে অবকাঠামো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ সড়কের পাশে ৬ একর জায়গা জুড়ে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মৎস্যবীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি। ১৯৮০ সাল থেকে খামারটিতে পাঁচটি হ্যাচারির মাধ্যমে শুরু হয় রেণু উৎপাদন। শুরুতে কার্যক্রম ছিল সফল ও সক্রিয়। কিন্তু ২০০০ সালের দিকে পানি সংকট দেখা দিলে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় বাীজ উৎপাদন কার্যক্রম।
দীর্ঘদিন ধরে খামারটি বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন উপজেলার স্থানীয় মৎস্যচাষিরা। চন্ডিগড় ইউনিয়নের তেলাচি গ্রামের চাষি আইয়ুব আলী বলেন, আমি ছয় বছর ধরে মাছ চাষ করছি। ১৮ বিঘা জমিতে ২৫টিরও বেশি পুকুর রয়েছে। দুর্গাপুরের খামার থেকে পোনা না পেয়ে আমাকে যেতে হয় জেলা শহর বা ময়মনসিংহ পর্যন্ত। এতে খরচ যেমন বাড়ে, কষ্টও হয় অনেক।
একই দুর্ভোগের কথা জানালেন মৎস্যচাষি সফিউল্লাহ আকন্দ। তিনি বলেন, আমার চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ১শ ৬০ একর। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করি। কিন্তু পোনা সংগ্রহে যেতে হয় নেত্রকোণা বা ময়মনসিংহ পর্যন্ত। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ে। দুর্গাপুর খামারটি যদি চালু থাকতো, আমাদের অনেক সুবিধা হতো।
স্থানীয় চাষিরা মনে করেন, রেণু উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে এবং চাষের পরিধি আরও বাড়বে। চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, নিজের পুকুরের জন্য পোনা কিনতে এতদূর ছুটতে হচ্ছে এটা খুব কষ্টকর। সরকারি খামারটি আবার চালু হলে আমরাও উপকৃত হবো, চাষিরাও আগ্রহী হবে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে খামার ব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র দাস জানান, বন্ধের পর আবারও ড্রিপ টিউবওয়েল স্থাপন করে পানি সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। তবে সম্প্রতি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খামারটি পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, মৎস্যচাষিদের সুবিধার্থে দুর্গাপুরের খামারটি আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রয়েছে।
জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলায় বর্তমানে ৪ হাজার ৪শ ৯২টি পুকুর রয়েছে এবং নিবন্ধিত মৎস্যচাষির সংখ্যা ২ হাজার ২শ ৬৫ জন। চাষিরা এখন তাকিয়ে আছেন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের দিকে। যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রেণু উৎপাদন কার্যক্রম দ্রæত চালু হলে দুর্গাপুরে মৎস্য খাতে নতুন প্রাণ ফিরবে এটাই তাদের প্রত্যাশা।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন