চলতি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে বেরোবি
এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো চলছে চলতি দায়িত্ব দিয়ে। এছাড়াও কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার কাঁধে বিভিন্ন কমিটি, উপ-কমিটির অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে অন্যান্য কাজ। ফলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছেনা অনেক কাজই।তবে উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, কাজগুলোর প্রক্রিয়া চলছে। ১০ বছরের অচলাবস্থা কাটানো কখনোই ৮ মাসে সম্ভব নয়। এর জন্য ন্যুনতম দুই বছর সময় লাগবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি দায়িত্ব দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ টির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের কার্যক্রম।৮ টির অধিক পদের বিভিন্ন দায়িত্বে নিজেই রয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট সময়ের দায়িত্ব প্রদানের নিয়ম না মেনে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আদেশ পাঠিয়ে চলতি দায়িত্ব দিচ্ছে বর্তমান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য’র ইচ্ছানুযায়ী, কয়েকজন শিক্ষককে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব দিয়ে ঠেকাসাড়াভাবে চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথমত,উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিয়মানুসারে পদে রয়েছেন সিনেটের চেয়ারম্যান, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি।তিনি উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগের উদ্যোগ না নিয়ে পদদুটো তাঁর দখলে রেখেছেন। সে হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন অর্থ কমিটির সভাপতি হিসেবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৯ সালের ২৯ নং আইন এর ২৬ নং অনুচ্ছেদের ৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক অনুষদে একজন করিয়া ডীন থাকিবেন এবং তিনি ভাইস-চ্যান্সেলরের নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ তত্ত্বাবধান সাপেক্ষে, অনুষদ সম্পর্কিত সংবিধি, বিশ্ববিদ্যালয় বিধি ও প্রবিধান যথাযথভাবে পালনের জন্য দায়ী থাকিবেন। কিন্তু উপাচার্য এখনো দুটি অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করছেন।
সিনেট ও সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হলেও উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারের পদ দুটি ফাঁকাই রয়ে গেছে। চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্থায়ীভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা না করে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে মাত্র। অন্যান্য দপ্তরগুলোতেও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্তও চলতি দায়িত্ব দিচ্ছেন নিজের ইচ্ছানুযায়ী।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদ হোসেন, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সেন্টারের পরিচালকের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের প্রশাসকের চলতি দায়িত্বে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা-যিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্টের চলতি দায়িত্বে, প্রক্টরের চলতি দায়িত্বে প্রফেসর ড. আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের চলতি দায়িত্বে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান ড. মো. নজরুল ইসলাম, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম চলতি দায়িত্বে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাফিউল আজম খান, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস পরিচালকের চলতি দায়িত্বে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান, ক্যাফেটেরিয়ার চলতি দায়িত্বে রয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্টের চলতি দায়িত্বে মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফেরদৌস রহমান, সাইবার সেন্টারের পরিচালকের চলতি দায়িত্বে মুহা. শামসুজ্জামান, দুর্যাগ ব্যবস্থাপনা-ই-লার্নিং সেন্টারের পরিচালকের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম।
চলতি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আরো অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টির মতো বিভিন্ন কমিটি-উপ-কমটির। ফলে একজন শিক্ষকের যখন মূল দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের পাঠদান সেখানে চলতি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকায় সব চলছে ঠেকাসাড়াভাবে।গুটি কয়েক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে একাধিক দায়িত্ব প্রদান করায় স্থবিরতা বিরাজ করছে বিভিন্ন কার্যক্রমে।গত বছরের জুন মাসে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকে ত্বরান্বিত করার লক্ষে ৩০/৩৫ টি কমিটি-উপ-কমিটি গঠন করেন।
এগুলোর মধ্যে ওয়েবসাইট মেইনটেনেন্স কমিটি ( আহ্বায়ক-মুহা. শামসুজ্জামান), অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ওপেন কমিটি( আহ্বায়ক-তাবিউর রহমান প্রধান), বই ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি , রুট বিন্যাস কমিটি (আহ্বায়ক-তাবিউর রহমান প্রধান), পোশাক ক্রয় কমিটি, পরিচ্ছন্ন কমিটি, ক্যাম্পাস সৌন্দর্য বর্ধন কমিটি(আহ্বায়ক-ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার),আইডি কার্ড তৈরী কমিটি(আহ্বায়ক-ড. রশীদুল ইসলাম)সহ অনেক কমিটি-উপ-কমিটি।আবার উপর্যুক্ত চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্বের এসব শিক্ষক একাধিক কমিটিতে রয়েছেন যারা তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে হিমশিম খাচ্ছেন।ফলে দৃশ্যমান হয়নি ওয়েবসাইট উন্নতকরণ, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ খোলা, রুট বিন্যাস কার্যক্রম, বই ক্রয় কার্যক্রমসহ অনেক কাজ।
অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য যাকে ইচ্ছা তাঁকেই চলতি-ভারপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন কমিটি, উপ-কমিটিতে দায়িত্ব দিয়েছেন।
একাডেমিক কার্যক্রমে জড়িত থাকার পরও চলতি ও অতিরিক্ত দায়িত্বে ফলে বিভিন্ন কার্যক্রম স্থবির হচ্ছে কি না জিজ্ঞেস করলে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মহা. শামসুজ্জামান বলেন, শিক্ষককে যে দায়িত্ব দেওয়া হয় তা তিনি পালন করেন তবে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে সেটির গতি স্থবির হয়ে যায়।তবে তিনি স্বীকার করেন, একজন শিক্ষককে একাধিক দায়িত্ব দিলে তা তাঁর জন্য অসুবিধে হয়ে দাঁড়ায়।তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের কাজের লিমিটেশন প্রয়োজন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারকে কল করলে তিনি বলেন, কাজ হচ্ছেনা সেটা কে বলল?কাজ না হওয়ার বেশ কিছু উদাহরণ দিলে তিনি বলেন, আপনি ( প্রতিবেদক) লিখিতভাবে আমাকে জানান।বিভিন্ন দপ্তরে স্থায়ীভাবে না দিয়ে চলতি দায়িত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা উপাচার্য(ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ) জানে।
তবে চলতি দায়িত্ব সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত থাকার কারণে এ প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। চলতি দায়িত্ব দেওয়ার কারণেই কাজের সুবিধা হচ্ছে’ বলে তিনি মনে করেন।
অতিরিক্ত এবং একাধিক দায়িত্ব প্রদানের ব্যাপারে তিনি বলেন, অবশ্যই সম্ভব। যার ক্যাপাসিটি আছে তিনি পারেন, যার ক্যাপাসিটি (কাজের ক্ষমতা) নাই তিনি পারেন না।তিনি আরো বলেন, আমার আস্থা অর্জন করতে হবে। যাকে তাকে দায়িত্ব দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো না।যার ক্যাপাসিটি রয়েছে তাঁকেই আমি দায়িত্ব দিয়েছি।
তবে তিনি বলেন, উপর্যুক্ত ‘কাজগুলোর প্রক্রিয়া চলছে।১০ বছরে যে কাজগুলো হয়নি সেগুলো ৮ মাসে কখনোই করা সম্ভব নয় , এগুলো করার জন্য সময় লাগবে বলে’ তিনি জানান।আমি গ্রাজুয়ালি (ক্রমানুসারে) যাদের দ্বারা কাজগুলো করা যায়, তাদের দ্বারা আমার স্টাইলে করবো।
একজনের একাধিক দায়িত্বে থাকায় কাজের স্থবিরতার বিষয়টি মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এখানে সমস্যার জট এত বেশি এবং ভেতর থেকে এমন সব কালচার (সংস্কৃতি)তৈরি হয়ে গেছে যেখানে ১০ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে একটি জায়গায় যেতে ন্যুনতম দুই বছর লাগবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন