চলেই গেল মুক্তামণি
রক্তনালি টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনি আর নেই (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। বুধবার (২৩ মে) সকাল ৮টার কিছুক্ষণ আগে মুক্তামনি না ফেরার দেশে চলে যায় বলে জানিয়েছেন তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন।
গত কয়েকদিন ধরেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলো শিশুটি। তার হাত অনেক ফুলে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিলো। কথা বলতেও পালছিলো সে।
মুক্তামনির নানা ফকির আহমেদ বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে সে মারা যায়।’
পরিবারের সদস্যরা জানায়, কয়েকদিন ধরেই মুক্তামনির শরীর ভালো যাচ্ছিল না। হাতের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণায় নির্জীব হয়ে পড়ছিল সে। টানা ছয় মাসের উন্নত চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মুক্তামনির ক্ষতস্থানে ফের পচন ধরে। ডান হাতের ক্ষত স্থানের পচা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছিল ছোট-ছোট পোকা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহিমের ১২ বছরের মেয়ে মুক্তামনির ডান হাতে দেড় বছর বয়সে একটি ছোট গোটা দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে থাকে।
হাতে বিকট আকৃতির ফোলা নিয়ে গত ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয় মুক্তামনি। গত ৮ অক্টোবর মুক্তামনির হাতে চতুর্থবার অস্ত্রোপচার হয়।
এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয়, ২৯ অগাস্ট দ্বিতীয় এবং ১২ অগাস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়েছিল তার।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেই মেয়ের চিকিৎসা সম্ভব হলো। এখন এক অন্যরকম মুক্তামনি ফিরে এসেছে গ্রামে।
এর আগে ২২ ডিসেম্বর সুস্থ না হলেও সে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় চিকিৎসকরা তাকে অনুমতি দিয়েছেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে মুক্তামনি তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবাইশা গ্রামে ফিরে যান।
মুক্তামনির বাড়ি ফেরা প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মুক্তামনি বাড়ি যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। তাই ওকে বাড়ি যেতে বলেছি। দুই থেকে তিন সপ্তাহ গ্রামে থাকতে সময় দেওয়া হয়েছে। তার ছয়টি অপারেশন করা হয়েছে। আরো অপারেশন লাগবে। কিন্তু পরিবার ও মুক্তামনি বাড়ি যেতে চাচ্ছে, তাই যেতে দেওয়া। কীভাবে থাকবে মুক্তামনি সেই নির্দেশনা তার স্বজনকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই চিকিত্সক।
বাড়ি যাওয়ার আগে মুক্তামনি বলে, আমার চিকিত্সা করার জন্য ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানাই। আমি বাড়িতে গিয়ে ভালো থাকতে চাই। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
রিবল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনি এ বছরের ১২ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১২ বছর বয়সি মুক্তামনির হাতে ৫ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। পরে আরো পাঁচটি অস্ত্রোপচার করা হয় তার। ২০ সদস্যের বেশি চিকিত্সকদের একটি দল জটিল এই অস্ত্রোপচারে যুক্ত ছিলেন। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিত্সক মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন