চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে অধিকারের দাবীতে স্বামীর লাশ দাফনে স্ত্রীর বাধা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে স্বামীর লাশ দাফনে স্ত্রীর বাঁধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ১৯ বছর অধিকার থেকে বঞ্চিত স্ত্রী স্বামীর মরণের পর সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি ফিরে পেতে লাশ দাফনে দেয়।

৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে স্ত্রীর বাঁধার মুখে সমাজের লোকজন লাশ দাফনে এগিয়ে আসতে অস্বীকৃতি জানায়। উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মাতৈন পাটওয়ারী বাড়িতে আব্দুর কাদের পাটওয়ারীর ছেলে মোস্তফা কামাল মৃত্যুর পর লাশ দাফনে বাঁধা দেয় তার স্ত্রী জান্নাত আক্তার।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০০২ সালে পারিবারিক সমঝোতায় মোস্তফা কামালের সাথে জান্নাত আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েদিন পর ননদ উম্মে হাবিবা দিপু, কামরুন্নাহার রুমির সাথে জান্নাত আক্তারের মনোমালিন্য হওয়াকে কেন্দ্র করে পারিবারিক দূরুত্ব সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে জান্নান আক্তারকে পাষবিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় শশুর বাড়ির লোক।

এরমধ্যে এক সন্তানের মা হয় জান্নাত আক্তার। বেকার স্বামীকে বাবার বাড়ির সহযোগিতায় বিদেশে পাঠায়। বিদেশ গিয়ে কয়েক বছর খোঁজ খবর রাখলেও বোন এবং বাবার চাপে পড়ে মোস্তফা কামাল তার স্ত্রীর বরণ পোষন বন্ধ করে দেয়।

দীর্ঘ দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর গ্রামে মানুষের সহযোগিতায় কোন মতে জীবন যাপন করে আসছেন। স্বামীর রোজগার করা টাকা বাবা আব্দুল কাদের, বোন উম্মে হাবিবা দিপু, কামরুন্নাহার রুমি, ভাই হাসানের নামে পাঠায়। মোস্তফা কামালের প্রবাস থেকে পাঠানো টাকায় বাবা আব্দুল কাদের ৯০ শতাংশ জায়গা নিজের নামে ক্রয় করে। মোস্তফা কামালের স্ত্রী জান্নাত আক্তার স্বামীর কাছ থেকে বরণ পোষণ না পেলেও একটু জায়গার জন্য বার বার শশুরের কাছে ছুটে আসে। স্বামীর অধিকার চাইতে এসে উম্মে হাবিবা দিপু, কামরুন্নাহার রুমির নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে যেতেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর স্বামী বিদেশ থেকে দেশে আসলে স্ত্রীর কাছে আসতে না দিয়ে মোস্তফা কামালকে তার বোন উম্মে হাবিবা দিপু, কামরুন্নাহার রুমি হাজীগঞ্জ বাজারে তাদের বাসায় আটক করে রাখে।

মোস্তফা কামার স্ত্রীর কাছে আসতে চাইলে তাকে ঘরে তালাবন্ধী করে রাখা হতো। এক সময়ে মোস্তফা কামাল অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তার দায়িত্ব নিতে নারাজ পরিবার। অসুস্থ্য মোস্তফা কামালের দায়িত্ব নেয় স্বামীর অধিকার বঞ্চিত জান্নাতুল ফেরদাউস স্বামীকে চিকিৎসা করাতে ঢাকায় ছুটে যান। হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ যোগাতে স্থায়ীয় সংসদ সদস্য মেজর অবসর প্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির সহযোগিতা নেয়। এমপির কাছ থেকে জান্নাতুল ফেরদাউস স্বামীর চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা পান।

মোস্তফা কামালের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, আমি স্বামীর অধিকার থেকে ১৯ বছর বঞ্চিত ছিলাম। আমার স্বামী জীবিত থাকাকালীন তারা আমাকে নির্যাতন করেছে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। আমার সন্তানদের পিতার ভিটায় যেন থাকতে পারে তাদের সেই অধিকার আদায় করার জন্য আমি বাঁধা দিয়েছি। আমার শশুর আমার স্বামীর টাকায় ক্রয় করা সম্পত্তি আমার সন্তানদের ফিরিয়ে দেয়া হোক।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নিউজ প্রোটাল লাইভ সম্প্রচার করায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানিয়া সুমন তিনি মৃত মোস্তফা কামালের বাবা আব্দুল কাদের এবং স্ত্রীর সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।