চাঁদপুরে মা ও মেয়ের ব্লাকমেইল: সম্ভ্রম হারিয়ে নিঃস্ব বহু মানুষ
চাঁদপুর শহরের মেথারোডে ভাড়া বাসায় থেকে মঞ্জু রানী ও লিপি এবং লতা শ্রাবন্তি নামের দুই মেয়ের ব্লাকমেইল কর্কান্ডে নিঃস্ব হচ্ছেন বহু মানুষ। ভুক্তভোগীদের অনেকে মানসম্মান রক্ষায় দেশ ছেড়ে পারি জমিয়েছেন বিদেশেও। মা এবং দুই বোনের এমন অপকর্ম সহ্য করতে না পেরে তাদের পরিবারেরই দুই মেয়ে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে বর্তমানে মুসলিম হয়ে অন্যত্র সংসার করছেন।
(৩০ ডিসেম্বর) শনিবার বিকালে এক অনুসন্ধানে মঞ্জু রানী ও তার দুই মেয়ের এই পাপের সম্রাজ্যের কথা উঠে আসে। জামতলার রিপন ঢালী বলেন, সোহেল নামের আমার এক বন্ধু ছিলেন মাছ ব্যবাসায়ী। যিনি ভ্যানে করে মাছ বিক্রি করতো। তার সাথে খাতির জমিয়ে বাকিতে মাছ কিনে লতা শ্রাবন্তি। পরে তাকে বাসা থেকে মাছের টাকা আনতে বললে ওনি কোন সংকোচ না রেখেই সরল বিশ্বাসে ওদের বাসাতে টাকা আনতে যায়। পরে তাকে রুমে আটকে রেখে ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা দাগে টাকা হাতিয়ে নেয়। যে টাকা আমি নিজ হাতে গিয়ে ওদের দিয়ে কোনমতে আমার বন্ধুকে ওখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।
একইভাবে লিপি এবং লতা শ্রাবন্তির ব্লাকমেইলের ফাঁদে পড়ে মানসম্মান, স্বর্ণালংকার ও লক্ষাধিক টাকা খুয়িয়েছেন বিপনীবাগের ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ নিতাই দাস, ১০নং চৌধুরীঘাটের উত্তম ঘোষ, পালবাজারের মুড়ি ব্যবসায়ী শিবু, বালিথুবার পাকা রাস্তার মানিক মিয়াসহ আরো বহু মানুষ। যাদের মধ্যে নিজেদের আত্ম সম্মান রক্ষায় বর্তমানে প্রবাসে পারি জমিয়েছেন পুরানবাজারের দাস পাড়ার অন্তর দাস, বালিথুবার মানিক মিয়াসহ অন্যরা।
বেশ কিছু ফাইল এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, লিপি রানী(২৪) ২০১৪ সালের ১৮ই নভেম্বর পুরানবাজারের বাতাসা পট্টির অন্তর কুমার দাশকে বিয়ে করেন। যদিও কথিত রয়েছে এর আগেই লিপি রানী ধর্ম পরিবর্তন করে দক্ষিণ গুনরাজদীর আনু বেপারীকে বিয়ে করেছিলেন। যে সংসারে তার সজিব নামে একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। যদিও সে মুসলিম সেজে সে বিয়ের কথা গোপন রেখে পুনরায় হিন্দু সেজে অন্তরকে বিয়ে করে প্রতারনা করে। আবার এই দুই বিয়ের কথা ধামাচাপা রেখে মঠখোলার গোপাল আশ্চার্যকে বিয়ের ফাঁদে ফেলেন লিপি। আর এরপর একই কায়দায় পালপাড়ার শিতলা মন্দিরের পাশের শাওন নামে আরও এক যুবককেও তিনি বিয়ে করেন।
লিপির এই প্রতারণামূলক বিয়ে বাণিজ্যকে সমর্থণ যুগিয়ে অর্থ ও স্বর্ণালংকার আদায়ে সরাসরি জড়িত লিপির মা মঞ্জু রানী, ভাই সোহাগ, সুমন, সুজন ও ছোট বোন লতা শ্রাবন্তি। সাধারণ লোককে ঠকাতে ও ভয়ভীতি দেখাতে লতা শ্রাবন্তি প্রায়ই পুলিশের পোশাক পরিহিত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও প্রকাশ করে তার সাথে পুলিশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান দেয়ার চেষ্টা করেন।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেপরোয়া বিপদগামী এই মঞ্জু রানীর নামে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মাদক মামলা রয়েছে। মামলা নং-১৭। যদিও ওই বছরের ২২ মার্চেও তার নামে একটি মাদক মামলা দায়ের হয়। মামলা নং-৩৮। এছাড়াও একাধিকবার মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে থানায় ডেকে আনা হয়।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার সাবেক ইন্সপেক্টর তদন্ত মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ওনার একটি মামলা তদন্তকালে জানতে পারি লিপি একসময় মুসলমান সেজে প্রতারণা করে আনু নামে এক লোককে বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নেয়। যে সংসারে ওদের একটি পুত্র সন্তানও হয়। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ওদেরকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেও ঐ সময় খবর পেয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, লতা শ্রাবন্তি নতুন বাজার ফাঁড়ির এক পুলিশ সদস্য ভোলার বাসিন্দা মিঠুন হাওলাদারকেও ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিলো। পরবর্তীতে বোনের মতোই প্রতারণা সাজিয়ে সেও তার মায়ের ইশারায় ওই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে মানসম্মানের ভয়ে ওই পুলিশ সদস্য দ্রুত চাকরি ছেড়ে ওদের চাহিদামাফিক কয়েক লাখ টাকা খসিয়ে বাধ্য হয়ে চাঁদপুর ছেড়ে যায়।
পালপাড়ার শাওন নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আদালত পাড়ায় আমি আমার স্ত্রী ও পুত্র সন্তান নিয়ে থাকাকালীন একই বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলায় কয়েক মাসের মধ্যেই ভাড়ায় উঠেন মঞ্জু রানী ও তার মেয়েরা। একই বিল্ডিংয়ে থাকার সুবাধে ওদের সাথে আমার সুসম্পর্ক হয়। যদিও তাদের ব্যপারে আমি পূর্বের ইতিহাস কিছুই জানতাম না। পরবর্তীতে আমার পিতা মাঝেমধ্যেই আমাদের বাসায় আসা যাওয়াকালে উপরতলার ওই ভাড়াটিয়াদের সন্দেহজনক চলাফেরা তার দৃষ্টিগোচর হয়।
তিনি ঐ সময় পুলিশ সদস্য হওয়ায় বিষয়টি তার উর্দ্ধতনদের অবগত করে সকলের সহায়তায় এদেরকে এই বাসা থেকে বিতারিত করেন। যার প্রেক্ষিতে আমার সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে প্রতিশোধমূলক আমাকে ফাঁদে ফেলে ওই লিপি বিয়ে করে। এরপর আমি তাদের কুকির্তী নানাভাবে জেনে ফেলায় আমার নামে মামলা দিয়ে এখন সে ৫ লাখ টাকা দাবী করছে। আমি এদের থেকে বাঁচতে চাই এবং সুষ্ঠু আইনী তদন্ত প্রত্যাশা করে ওদের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মঞ্জু রানী ও তার দুই মেয়ে লিপি এবং লতা শ্রাবন্তিসহ অন্য কারোরি কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এস আই রুহুল আমিন বলেন, শাওন নামে এক ছেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা আমি তদন্ত করছি। সেই তদন্তকাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন