চাঁদের অদেখা অংশে আলু ও ফুলের বীজ নিয়ে যাচ্ছে চীন
চাঁদের অদেখা অংশে প্রথমবারের মতো রোবটযান নামানোর অভিযান শুরু করেছে চীন। চাং’ই-৪ নামের এ অভিযানে চাঁদে ‘ভন কারমান ক্র্যাটার’ নামের যে অংশে রোবটযানটি পাঠানো হবে, চাঁদের সেই অংশটি কখনো পৃথিবীর দিকে ঘোরে না। ফলে এ অংশটি নিয়ে বরাবরই মানুষের আগ্রহ রয়েছে।
দেশটির গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রদিবেদনে বলা হয়, শিচ্যাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রোবটটি পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে চাঁদের পাথর আর মাটির নমুনা সংগ্রহের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে চীনের জন্য। তবে জানুয়ারি মাসের আগে এ চন্দ্র রোবটটি চাঁদে অবতরণ করতে পারবে না।
‘ভর কারমান ক্র্যাটার’ নামে চাঁদের ওই অংশটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অনেকদিনের। এখানে চাঁদের সবচেয়ে পুরনো আর নানা উপাদানে সমৃদ্ধ এলাকা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আইকন বেসিন অবস্থিত। ধারণা করা হয়, কোটি কোটি বছর আগে একটি বিশাল উল্কাপিণ্ডের আঘাতের কারণে ওই এলাকাটি তৈরি হয়েছিল। এ মিশনের মাধ্যমে ওই এলাকার ভৌগলিক বৈচিত্র্য এবং পাথর ও মাটির বৈশিষ্ট্য বোঝা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
চাঁদের অন্ধকার দিক
পৃথিবী থেকে সবসময়ে চাঁদের একটি অংশই দেখা যায়। কারণ চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে যে সময় নেয়, আবার একই সময় নিজের অক্ষ পথে ঘুরতেও সেই সময় লাগে। ফলে পৃথিবীর দিকে সবসময় চাঁদের একটি মুখই থাকে।
যদিও ওই অংশটিকে বিজ্ঞানীরা ‘ডার্ক সাইড’ বা ‘অন্ধকার দিক’ বলে ডেকে থাকেন। কিন্তু সেখানেও আসলে সমান হারে সূর্যের আলো পড়ে। বিজ্ঞানীদের এ ‘অন্ধকার দিক’-এর আসলে এভাবে অর্থ করা যেতে পারে, যে অংশটি পৃথিবীর মানুষ দেখেনি।
পৃথিবীর কাছাকাছি অংশের তুলনায় এ দূরের অংশটি বেশ আলাদা। এখানে জমাট পুরনো ভূত্বক রয়েছে, যার চারদিকে রয়েছে অসংখ্য গর্ত। সেখানে বেশ কিছু অশ্বখুর আকৃতির আগ্নেয়গিরি জাত শিলা রয়েছে, যেমনটা রয়েছে পৃথিবীর কাছের অংশেও।
যে শক্তির কারণে দক্ষিণ মেরুর আইকন বেসিনের তৈরি হয়েছে, সেটি হয়তো চাঁদের ওপরের আবরণ ভেঙে অনেক গভীরে চলে গেছে। সেক্ষেত্রে চাং’’ই-৪ এর কাজ হবে, এসব উপাদান পরীক্ষা করে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহের ইতিহাস আবিষ্কার করা। এ মিশনের আরেকটি লক্ষ্য হবে, চাঁদের অপর পাশে একটি বেতার যোগাযোগের পরিবেশ তৈরি করা এবং সেখানে ভবিষ্যতের টেলিস্কোপ স্থাপনের জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরি করা।
আলু ও ফুলের বীজ
চীনের এ মিশনের মহাকাশযানটিতে ৩ কেজি আলুর বীজ আর ফুলের বীজ নিয়ে যাচ্ছে, যা দিয়ে চাঁদে জীববিজ্ঞানের কিছু পরীক্ষা চালানো হবে। কৃত্রিম পরিবেশ তৈরির ‘চাঁদের ছোট জীবমণ্ডল’ নামের এ নকশাটি চীনের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনায় করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়াকে এ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান লিউ হানলোং অনেক আগে বলেছিলেন, ‘চাঁদে আমরা বীজের অঙ্কুরোদগম এবং আলোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি পরীক্ষা করে দেখতে চাই।’
প্রকল্পের প্রধান নকশাকার শেই জেঙশিন বলেছেন, ‘এই ক্ষুদ্র জীবমণ্ডলের তাপমাত্রা আমাদের অবশ্যই ১ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে এবং আর্দ্রতা ও পুষ্টির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।’
চাঁদের ওই অংশটি পৃথিবী থেকে যেহেতু দেখা যায় না, তাই মিশন যানটিকে কুয়িকিয়াও নামের একটি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এসব তথ্য পৃথিবীতে পাঠাতে হবে। এ বছরের মে মাসে ওই উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করেছে চীন। এ মহাকাশযানটি হচ্ছে চাং’ই-৩ এর পরবর্তী সংস্করণ। ২০১৩ সালে চাঁদে ওই যানটি পাঠিয়েছিল চীন।
চীনের এ যানটিতে দুইটি ক্যামেরা রয়েছে। একটি অংশ তেজস্ক্রিয়তা যাচাই করতে পারে এবং আরেকটি অংশ মহাকাশের স্বল্পমাত্রার তরঙ্গ পর্যালোচনা করতে পারে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠের নীচে কি আছে, সেটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি রাডার রয়েছে। এমন কিছু যন্ত্র রয়েছে, যেটি খনিজ উপাদান সনাক্ত করে বিশ্লেষণ করতে পারে।
চাঁদ নিয়ে গবেষণায় চীনের বিশাল কর্মসূচীর অংশ হচ্ছে এ মিশন। প্রথম এবং দ্বিতীয় চাং’ই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল কক্ষপথ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ। তবে তৃতীয় আর চতুর্থ মিশনের লক্ষ্য চাঁদের ভূপৃষ্ঠ। চাং’ই পাঁচ আর ছয়ের লক্ষ্য হবে চাঁদ থেকে সংগৃহীত পাথর আর মাটির নমুনা ফিরিয়ে এনে গবেষণাগারে যোগান দেয়া।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন