চাকরিজীবী ছেলের ভিখারিনী মা!
‘ছেলে আমার মস্ত বড়, মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী, সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি।’ নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানটির কথা অনেকেরই মনে রয়েছে।
গানের সঙ্গে বাস্তব জীবনেও অনেকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভিক্ষা করেই পাঁচ ছেলে এবং মেয়ে মেয়েকে বড় করেছেন মা নসরান বেওয়া (৬০)। এক ছেলে সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি পেয়েছেন। ছেলের স্ত্রী ইউপি সদস্যা। বাকি ছেলেরা করেন কৃষি কাজ।
কিন্তু ভাগ্য বদলায়নি বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের ভিক্ষুক মা নসরান বেওয়ার। তিনি রয়ে গেছেন সেই ভিখারিনীই।
ছেলে চাকরি করেন কমিউনিটি ক্লিনিকে, ছেলের বউ ইউপি সদস্য তবুও এক মুঠো ভাত জুটে না তার। ভিক্ষা করেই নসরান বেওয়া জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যান্য এলাকার মতো মালঞ্চি বাজারে মাঝে মধ্যে লাঠি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায় নসরান বেওয়াকে। হাত পাতছেন একে অন্যের কাছে। অনেকে আবার তাচ্ছিল করে সরিয়ে দিচ্ছেন। তীব্র গরম যেন তার কাছে কিছুই নয়, যেখানে তীব্র রোদ আর গরমে বের হওয়া কঠিন সেখানে জীবনের তাগিদে ভিক্ষা করে চলছে নসরান বেওয়া। এভাবে সারা দিন ভিক্ষা করে যা আয় হয় তা দিয়ে জীবন চালিয়ে নেন তিনি।
মালঞ্চি বাজারে কথা হয় ভিক্ষুক মা নসরান বেওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনো মতে জীবন চলছে। বয়স্ক ভাতায় যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চিকিৎসা আর পেটে খাওয়া হয় না। মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে চেয়ে নিতে হয় টাকা, আর ওই টাকা দিয়েই কোনো মতে চলে সংসার।
তবে এসময় নসরান বেওয়ার চোখে তীব্র আবেগ আর চোখে ছল ছল পানি যেন গড়িয়ে পড়ছে। দুঃখ করে বলেন, তার ছেলে ও ছেলে বৌ তাকে কোনো ভাত কাপড় দেয় না।
তিনি জানান, তিনি ভিক্ষা করেই ছেলেদের পড়া লেখা করিয়েছেন। এর মধ্যে ছেলে রফিকুল ইসলাম কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। আর সেই ছেলের বউ ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। বড় আশা ছিল ছেলে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে মাকে দেখাশুনা করবে, কিন্তু সে আশা ধুলিসাৎ হয়ে এখন ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
সারা জীবন শ্রম আর কষ্ট করে সংসার আগলে রেখেছিলেন নসরান বেওয়া। কিন্তু জীবনে একটু সুখের বদলে পেয়েছেন লাঞ্চনা আর বঞ্চনা। জীবনের শেষ সময়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বৃদ্ধা মা। ছেলে চাকরি করলেও খোঁজ খবর রাখেন না মায়ের। বৃদ্ধ মায়ের বাস্তব জীবনের এমন গল্প যেন সইবার না।
তবে বৃদ্ধ নসরান বেওয়ার জীবন কাহিনীর গল্প হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু যে ঘৃণা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, সেটা কী কখনও শুধরাতে পারবে নসরান বেওয়ার ছেলেরা।
সারা জীবন অপরাধ বোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে। আর যেন নসরান বেওয়ার মতো জীবনযুদ্ধে কাউকে নামতে না হয় এমন প্রত্যাশাই যেন সবার।
এ ব্যাপারে তার ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, মাকে আমরাই দেখাশুনা করি। কিন্তু মাঝে মধ্যে কথা না শুনে বাইরে গিয়ে মানুষের নিকট হাত পাতেন। মায়ের এই হাত পেতে অন্যের টাকা নেয়াটা আমরা পছন্দ করি না। আবার কিছু করতেও পারি না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন