চাবুক দিয়ে ১১ শিশুকে বর্বর নির্যাতন, লোমহর্ষক বর্ণনা
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একটি রেস্তোঁরা থেকে ১১ শিশুকে উদ্ধারের পর তাদের উপর মালিকের চালানো বর্বর নির্যাতনের লোমহর্ষক বিবরণ পাওয়া গেছে।
উদ্ধার হওয়া কয়েকজন শিশু জানিয়েছে রেস্তোঁরায় তাদের দিয়ে শুধু যে অমানবিক পরিশ্রম করানো হতো তাই নয়, শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি চলতো যৌন নির্যাতনও।
শুক্রবার (৩ আগস্ট) রাতে রাঙ্গুনিয়ার শান্তির হাট বাজারের ‘খাঁজা বাবার হোটেল’ নামে একটি রেস্তোঁরায় অভিযান চালিয়ে ১১ শিশুকে উদ্ধার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
অভিযানে উদ্ধার হওয়া শিশুরা হলো- চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মো. হানিফের ছেলে মো. আরাফাত (১৪), আনোয়ারা উপজেলার মো. আজাদের ছেলে মো. মারুফ (১২), গাজীপুর জেলার টঙ্গীর বাসিন্দা আব্দুর রহিমের ছেলে মো. ইয়ামিন (১৫), কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালী মডেল থানা এলাকার মোস্তফা কামালের ছেলে মো. ওমর ফারুক (১৭), লাকসাম থানার রুস্তম আলীর ছেলে মো. সৌরভ (১৪), একই থানার আলী হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল হাই (১৬) ও মো. সালাউদ্দিনের ছেলে মো. সাব্বির (১০), আলকরা বাজার এলাকার সুমনের ছেলে মো. সুজান (১৫), করেরগাঁ গ্রামের মো. জসিমের ছেলে মো. রাসেল (১৬), ফেনী জেলার দাগনভূঞা থানার মো. হানিফের ছেলে মো. অনিক (১৫) ও ভোলা সদরের মো. কামালের ছেলে মো. শাহীন (১২)।
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে রেস্তোঁরা মালিক কামাল উদ্দিনকে (৩২)। তিনি রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নের রোসাই পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অভিযান পরিচালনাকালে ওই রেস্তোঁরার ক্যাশবাক্সে দুটি প্যাকেটে ৪শ’ পিচ ইয়াবাও পাওয়া যায় বলে দাবি করেছে র্যাব।
র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মিমতানুর রহমান বলেন, ‘গত ২০ জুন টঙ্গীর ভাটারা থেকে নিখোঁজ হয় মাদরাসা ছাত্র ইয়ামিন। তার বাবা আবদুর রহিমের অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে র্যাব। গত মাসের শেষের দিকে র্যাব-৭কে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর থেকে কাজ শুরু করি। তবে শিশুদের এমনভাবে রাখা হতো যে, তারা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনোভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতো না।’
তিনি জানান, গ্রেফতার রেস্তোঁরা মালিক কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনসহ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ভবঘুরে ও টোকাই শ্রেণির পথশিশুদের স্বল্প টাকায় কিনে দোকানে জিম্মি করে বিনে টাকায় কাজ করাতো। খাবার ও পরনের কাপড়চোপড়ও ঠিকমতো দিতো না।
তিনি আরও বলেন, ‘কামাল ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় তার নির্ধারিত দালালদের কাছ থেকে এসব শিশুকে কিনে নিতো। রাখতো একটি ছোট্ট কুঁঠরিতে গাদাগাদি করে। এদের না দেয়া হতো খাবার, না দেয়া হতো কাপড়-চোপড়। এছাড়া তার কথার এদিক-ওদিক হলেই শিশুদের উপর চলতো বর্বর নির্যাতন।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, অভিযানে রেস্তোঁরার বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে দুটি চাবুক ও ৭টি কন্ডমের প্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া শিশুদের গায়ে চাবুক দিয়ে নির্মম নির্যাতনের দাগ পাওয়া গেছে। কাজে ফাঁকি ও পালিয়ে যাবার চেষ্টার অভিযোগে প্রায়ই শিশুদের উপর নির্যাতন করা হতো। সবচেয়ে অমানবিক হচ্ছে, এ সব অসহায় শিশুদের উপর নিজেদের বিকৃত যৌন রুচির প্রয়োগ করতো কামাল ও তার সহোযোগীরা। শিশুরা রাজি না হলে চলতো শারীরিক নির্যাতন।’
এদিকে রাঙ্গুনিয়ার শান্তির হাট বাজারের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামাল দিনের বেলা রেস্তোঁরা খুলতেন না। সারা রাত রেস্তোঁরা খোলা রেখে সকাল ৮টায় বন্ধ করে দিতেন। তার কিছু নির্দিষ্ট খদ্দের আছে, তারাই মূলত ওই রেস্তোঁরায় আসতো। অভিযোগ রয়েছে শিশুদের দিয়ে ইয়াবার ব্যবসার পাশাপাশি বিকৃত যৌন রুচির মানুষদের কাজে ব্যবহার করতো রেস্তোঁরা মালিক কামাল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন