চিরনিদ্রায় ব্যান্ডতারকা শাফিন আহমেদ

চিরনিদ্রায় গেলেন ব্যান্ডতারকা শাফিন আহমেদ। ৩০ জুলাই মঙ্গলবার বাদ জোহর বনানী গোরস্থানে বাবার কবরে দাফন করা হয় তাকে।
বাবা শাফিন আহমেদকে কবরে নামানোর দৃশ্যটি মানসিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি ছেলে আজরাফ আহমেদ অজি। গোরস্থানে জ্ঞান হারালে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে।

গত ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার কথা ছিল শাফিনের। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। শাফিন আহমেদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ২৭ জুলাই ভার্জিনিয়ার দার আলনূর ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারে। গতকাল সোমবার দেশে আনা হয় তার মরদেহ। আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার পর তাকে বানানী গোরস্থানে দাফন করা হয়।

শাফিন আহমেদকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন সংগীতাজ্ঞনের মানুষেরা। পরস্পরের সঙ্গে শোক বিনিময়ের পাশাপাশি শিল্পীর বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ার নিয়েও কথা বলতে শোনা যায় তাদের।

গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলি বলেন, ‘শাফিন ভাইয়ের জন্য কত আগে লিখেছিলাম “পলাশীর প্রান্তর” গানটি। সেটি এখনও প্রাসঙ্গিক। সেই গানের মধ্যদিয়ে তারুণ্যের দ্রোহ হয়ে বেঁচে থাকবেন শাফিন ভাই।’ অবসকিউর ব্যান্ডের ভোকাল টিপু বলেন, ‘মাইলস ব্যাপারটাই ছিল আলাদা। আমি যখন ব্যান্ড করিনি, তখন টিকিট কেটে মাইলসের শো দেখতে গেছি। একটা জেনারেশন মনে হচ্ছে পরপর চলে যাচ্ছে।’

ফিডব্যাক ব্যান্ডের দলনেতা ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘৪৮ বছরের সম্পর্ক আমাদের। তার চলে যাওয়া আমার জন্য খুব কষ্টের।’ শিল্পী পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘শাফিন ভাইয়ের চলে যাওয়াটা আমি মেনেই নিতে পারছি না। সবারই খারাপ লাগছে। আমি একজন গার্ডিয়ান হারিয়েছি। সময় সময় তার কাছ থেকে অনেক পরামর্শ নিয়েছি। সবাই চলে যাবে, কিন্তু তার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না।’

শাফিন আহমেদকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন নগরবাউল জেমস, মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডের ভোকাল মাকসুদুল হক, ওয়ারফেজ ব্যান্ডের দলনেতা শেখ মনিরুল আলম টিপু, শিল্পী বাপ্পা মজুমদার, শওকত আলী ইমন, আঁখি আলমগীর, শুভ্রদেব, ইমন চৌধুরী, সোনার বাংলা সারকাস ব্যান্ডের ভোকাল প্রবর রিপন, গীতিকবি জুলফিকার রাসেল, গান বাংলা চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপস, অভিনেতা ইরেশ যাকের প্রমুখ।

এ ছাড়া শাফিনের সদ্য ছেড়ে আসা ব্যান্ড মাইলসের সদস্যদেরও সেখানে উপস্থিত হতে দেখা গেছে।

শাফিনের ভাই ও মাইলসের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘শাফিনকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তার সম্পর্কে আপনারা সবাই জানেন। আপনারা জানেন আপনারা কাকে হারিয়েছেন। সংগীতাঙ্গন জানে, তারা কী হারিয়েছে, আমি জানি আমি কাকে হারিয়েছি, তার সন্তানেরা জানে তারা কাকে হারিয়েছে।’

১৯৮০ সালে ভোকাল ও রিদম গিটারিস্ট হিসেবে মাইলস ব্যান্ডে যোগ দেন শাফিন আহমেদ। ১৯৮২ সালে ফরিদ, কামাল, হামিন, শাফিন এবং মানাম-এর দল ‘মাইলস মাইলস’ শিরোনামে একটি ইংরেজি কাভার অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করে। ১৯৮৩ সালে ব্যক্তিগত কারণে ব্যান্ড ছেড়ে তিনি চলে যান যুক্তরাজ্যে। ১৯৯০ সালে শাফিন আহমেদ যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে ভোকাল ও বেজ গিটারিস্ট হিসেবে আবারও দলে যোগ দেন। ১৯৯১ সাল থেকে দলের লাইন আপে ছিলেন হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, মিল্টন আকবর ও শাফিন আহমেদ।

১৯৯২ সালে মাইলসের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রকাশিত হয়। সেই অ্যালবামে মানাম আহমেদের সুরে বহুল আলোচিত ‘চাঁদ তারা’ গানটি গেয়েছিলেন শাফিন। মানাম আহমেদের সুরে শাফিনের গাওয়া গানগুলো হলো ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘চাঁদতারা’, জ্বালা জ্বালা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘ভুলব না তোমাকে’, ‘তোমার আশায়’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’। নিজ সুরে শাফিন আহমেদ গেয়েছেন ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘জাদু’, ‘দরদিয়া’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’, ‘পলাশীর প্রান্তর’। এ ছাড়া হামিন আহমেদের সুরে গেয়েছেন ‘নীলা’, ‘সুপ্ত বাসনা’, ‘এ সময়’, ‘শান্তি নাই’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘শান্তি চাই’, ‘আচেনা জীবন’ গানগুলো। মাঝে দুবার শাফিন আহমেদ মাইলস ছেড়ে একক ক্যরিয়ারে মন দেন। ২০১৯ সালের শেষ দিকে শেষবার তিনি মাইলস ছেড়ে নিজের দল ভয়েজ অব মাইলস গড়েন। শাফিন কিংবদন্তিসম সুরকার কমল দাশগুপ্ত ও নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের ছোট ছেলে।