চীনকে ঠেকাতে একাট্টা চার দেশ
২০০৭ সালে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন‘ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তি দেখিয়ে ‘কোয়াড’ নামে সংলাপের সূচনা হয়েছিল। সেই সংলাপের সূত্র ধরেই মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) এই চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা থেকে টোকিওতে দু’দিনের বৈঠকে বসছেন।
‘কোয়াড সংলাপ’ শুরুর দশ বছরে কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে ২০১৭ সাল থেকে নতুন করে জীবন ফিরে পেলেও টোকিওর এই বৈঠক নিয়ে এক বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আর এই আগ্রহের প্রধান কারণ যে চীন তা বলায় বাহুল্য। যদিও চীনকে আটকাতেই যে এই জোটবদ্ধ উদ্যোগ, পরিষ্কার করে তা কখনই বলা হয়নি কখনই।
এমনকি এসব বৈঠক নিয়ে এই চারটি দেশের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে জনসমক্ষে যেসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে বা যেসব নথিপত্র চালাচালি হয়েছে, তার কোথাও চীন শব্দটিই নেই।
কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, টোকিও বৈঠকে তা বদলে যেতে পারে। কারণ যে দেশটি এই প্লাটফর্মকে প্রকাশ্যে ‘চীন-বিরোধী‘ তকমা দিতে সবচেয়ে বেশি কুণ্ঠিত ছিল, সেই ভারত তাদের অবস্থান অনেকটাই বদলে ফেলেছে।
এদিকে চীন তাদের প্রধান বৈরী এই চারটি দেশের মধ্যে এই বৈঠক নিয়ে যে একইসাথে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। বিবিসি বাংলা জানায়, মঙ্গল ও বুধবার টোকিওতে এই বৈঠক চলার সময় একই সঙ্গে তিন থেকে চারটি নৌ এবং বিমান মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
এমনকি এসব বৈঠক নিয়ে এই চারটি দেশের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে জনসমক্ষে যেসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে বা যেসব নথিপত্র চালাচালি হয়েছে, তার কোথাও চীন শব্দটিই নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা র্যান্ড কর্পোরেশনের সর্বসাম্প্রতিক এক প্রকাশনায় সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যাস লিখেছেন, পরিস্থিতি এখন অন্যরকম কারণ, তার মতে, এই চারটি দেশের সবগুলোই এখন চীনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রশ্নে একমত।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে কোয়াড প্লাটফর্মকে একটি প্রতিরক্ষা জোটে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল চীনকে নিয়ে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার আড়ষ্টতা। চীনকে কতটা কোণঠাসা করা উচিৎ, তা নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিধা ছিল। “কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তারা সবাই একমত,“ লিখেছেন ডেরেক গ্রসম্যাস।
‘বিশেষ করে আমার সবসময় মনে হয়েছে, কোয়াডে ভারত ছিল উইক লিঙ্ক। কিন্তু ভারত মনে হয় তার অবস্থান বদলে ফেলছে, এখন মনে হচ্ছে চারটি দেশই চীনের প্রশ্নে একমত।’
ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কোয়াডের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহী। সেই সাথে, মি. গ্রসম্যান মনে করেন, ২০১৭ সালে ডোকলাম সীমান্তে বিরোধ এবং জুন মাস থেকে লাদাখ সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে ভারতের অবস্থান কট্টর হয়েছে। ‘এমনকি চীনের সাথে সম্পর্কে ভারসাম্য রাখা নিয়ে ভারতে যারা সব সময় সোচ্চার ছিলেন, তারাও তাদের অবস্থান শক্ত করছেন।’
এদিকে দিল্লিতে জওহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদোয়াজও মনে করেন, ভারতের বর্তমান সরকারের মধ্যে এখন এমন বিশ্বাস দিনকে দিন দৃঢ় হচ্ছে যে কেবলমাত্র সামরিক শক্তির ভয় দেখিয়েই চীনকে সামলানো সম্ভব।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভারতের বর্তমান সরকার মনে করছে চীন ভারতের ভৌগলিক সার্বভৌমত্ব হুমকিতে ফেলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের স্বার্থ-প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করছে, এবং এ থেকে চীনকে বিরত রাখতে হলে শক্তির ভয় দেখানো ছাড়া বিকল্প নেই।’
তার মতে, অন্য দেশের সাথে কোনো সামরিক বা প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে ভারত এখন প্রস্তুত। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ভরদোয়াজ গত সপ্তাহে কোয়াড সম্পর্কে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন।
বৃহস্পতিবার এক বক্তৃতায় জেনারেল রাওয়াত বলেন, ‘ভারত মহাসাগর অঞ্চলে এবং আশপাশের অন্যান্য মহাসাগরে আতঙ্ক-উস্কানি ছাড়া চলাফেরা, অন্য কোনো দেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করতে কোয়াডের গুরুত্ব অনেক।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাগরে এবং আকাশে অবাধ গতিবিধি নিশ্চিত করতে ভারত উদগ্রীব।’ কারো নাম তিনি উল্লেখ করেননি, তবে নাম না করলেও জেনারেল রাওয়াত এখানে চীনের কথাই বলেছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন