চুয়াডাঙ্গায় বেসরকারী চাকরীজীবীদের দায়িত্ব নেবে কে
চলমান অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যদিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশ। বর্তমানে নিত্যপণ্যসহ সকল দ্রব্যের লাগামহীন দাম চলমান থাকায় মানুষ অস্থির দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিরা বেকায়দায় রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ জেলার বেসরকারী অফিস মার্কেট শপিংমল মুদি দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিরা সবথেকে পড়েছে বিপদে। চুয়াডাঙ্গার মতো এই মফস্বল শহরে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০-১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরীজীবিরাই অধিকাংশ।
বর্তমানে দেশের ঝনঝনে পরিস্থিতিতে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটেই চলেছে জিনিসপত্রের দাম। এতে করে চুয়াডাঙ্গায় ওইসকল বেসরকারী ছোট চাকরীজীবিরা পড়েছে বিপদে। বর্তমানে তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ উপচেপড়ায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবনযাপন করছে এ জেলার খেটেখাওয়াসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিরা।
বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজার এতই ঝাঁঝ যে, রাতের ঘুম হারাম করে দেয়। সকাল হলেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যেই বাজারে আসলেও সামর্থ্য অনুযায়ী বাজারঘাট করতে পারছে না মানুষ। আয়ের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার করলেও ফাঁকা জায়গাটা দখল করে নিয়েছে পকেট।
এদিকে, সংসারের খরচ মিটিয়ে সন্তানের লেখাপড়াও ঠিকমত করাতে পারছেনা ওইসকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীজীবিরা। অথচ সরকারী চাকরীজীবীদের বেতন স্কেল ঠিক বাজার অনুপাতেই হয়।
দিনে দিনে নিত্যপণ্যসহ সকল জিনিসপত্রের দাম ধাপে ধাপে যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও বৃদ্ধি করে সরকার।
প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মিডিয়াসহ গণমাধ্যমে দেখা যায়, খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ছোটবড় চাকরীজীবিদের আর্তনাদ। তাদের সংসার চালাতে নানা অভিযোগেরও যেন শেষ নেই। দিন যতই যায় জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই বাড়ে। কিন্তু সরকার-তার আমলাদের বেতন বৃদ্ধি করলেও লক্ষ্য থাকেনা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিদের।
যার ফলে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিদের জীবনযাপনে মহাসঙ্কট তৈরী হয়েছে। এতে স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, আমরা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো চাকরি করি, বর্তমানে জিনিসের যে দাম তাতে করে এক মাসের আয়ের টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে ২০ দিনেই। তাহলে আর বাকী দিন কী না খেয়ে থাকবো?
এদিকে, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও মুখেই রয়ে যায় সবকিছু। কোনো কিছুই সাধারণ মানুষের জন্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে আষ্টিপৃষ্টভাবে। আর সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সংবিধানে নেই। যে কারণে সবাই ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করলেও সুবিধা ভোগ করে সরকারী কর্মচারীরা। যা বৈষম্য বটে।
এভাবে চলমান থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ।
অপরদিকে, স্থানীয়দের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভে বলেছেন, আমরা বেসরকারি চাকরি করি। তাই বলে কী সরকার আমাদের চাকরীর বেতনের বিষয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কোনো আলোচনা করে না। অথচ এই আমাদের মতো বেসরকারী চাকরীজীবি সাধারণ মানুষই ভোট দিয়ে সরকার বানায়।
সরকার যদি সরকারী চাকরীজীবিদের নজর রাখতে পারে তাহলে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবিদের পাশে না থাকায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সৌদি আরব শ্রীলঙ্কাসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাজার নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে তাদের বেতন নির্ধারণ করেছে সৌদি ও শ্রীলঙ্কান সরকার। তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে বৈঠক করে বাজার অনুপাতে বেতন বৃদ্ধি করেছে।
দেশটির মানবসম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এখন থেকে সৌদির বেসরকারি বিভিন্ন খাতে কর্মরত সৌদি নাগরিকদের ন্যূনতম বেতন হবে চার হাজার রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ২১৭ টাকা। ১ রিয়াল সমান ২৯ দশমিক ৩০ টাকা দরে এ হিসাব করা হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ নতুন বেতনকাঠামো কার্যকর হয়েছে।
সৌদির শ্রমবাজারের শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করা এবং বেসরকারি খাতের চাকরিতে আকর্ষণ বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ বেতন বাড়াতে প্রত্যেক কর্মীকে মাথাপিছু ৩ হাজার ২০০ রিয়াল করে ভর্তুকি দেবে সরকার। মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তহবিল হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (হাদাফ) থেকে দেয়া হবে এ ভর্তুকির অর্থ।
অথচ, এ দেশের সরকার এমন মহান উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তবে সৌদি সরকারের মতো যদি বেসরকারী চাকরীজীবিদের বেতন বৃদ্ধি না করে তাহলে ২০২০ সালের অনুপাতে সেই বাজার ফিরিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করে চুয়াডাঙ্গাবাসী।
এ বিষয়ে একজন কাপড়ের দোকানের সিনিয়র একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার বেতন ১২ হাজার টাকা। কিন্তু জিনিসপত্রের যে দাম চলছে-তাতে করে আমাদের ঠিকভাবে চলে না। কি করবো দোকানের মালিক যদি বেতন না বাড়ায়। আমরা কি করবো। সরকার যদি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি নির্দেশনা থাকতো তাহলে আমাদের চিন্তা থাকতো না।
এদিকে, জাহিদ হাসান নামের এক চাকরিজীবি বলেন, আমি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করি পাশাপাশি ছোট একটা ব্যবসা করি। তাতে আমার মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা। এতে সংসার চালাতে গিয়ে ছিটকে পড়ছি। এভাবে দিন চলায় আমাদের ভবিষ্যতের জমানো টাকাও সংসারের পিছনে খরচ করতে হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন