চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দর দিয়ে ৯ মাস ধরে বন্ধ আমদানি পণ্য
অনেক দেশেই ধান গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হলেও দেখা যায়, নানা রোগবালাই আবহাওয়া তাত্ত্বিকের কারণে বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তখন দেখা যায়, স্ব স্ব দেশেই সঙ্কট তৈরী হয় ধান, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, খৈল, পাথরসহ নানা ধরনের পণ্যে। বাংলাদেশেও যখন নানা কারণে ফসলের ঘাটতি দেখা দেয়। ঠিক তখনই ভারত থেকে ওইসব ফসলের আমদানিকৃত এসব পণ্যের বেশিরভাগ অংশই চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে।
কিন্তু এ অঞ্চল দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, ঢাকার সঙ্গে অল্প দূরত্ব ও স্বল্প ব্যয়ে আমদানি-রপ্তানির জন্য দর্শনা রেলবন্দর দূরত্ব কম এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং মানসম্মত হওয়ায় দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এ পথ দিয়ে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পেতো পণ্য আমদানির পরিমাণ। কিন্তু গত কয়েক মাস তা বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়ছে রেল বন্দর এলাকা।
এদিকে, এ পথ দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৯ মাস ধরে আলু-পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে কবে নাগাদ আমদানি স্বাভাবিক হবে সে ব্যাপারেও কোনো নিশ্চয়তা নেই এখনও। দর্শনা রেলবন্দর কর্তৃপক্ষ বা আমদানিকারকরাও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।
দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক জেলা থেকে ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজের একটি চালান এসেছিলো চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনে।
বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবি) কর্তৃপক্ষ ভারতীয় রেলওয়ের ৪২টি ওয়াগন ভর্তি পেঁয়াজের চালান নিয়ে আসে। যা সেসময় দর্শনায় পৌঁছানোর পর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর সিরাজগঞ্জের পথে রওনা হয় ওয়াগনগুলি। এরপর থেকে বন্ধ আছে দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি।
এছাড়া একই মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বশেষ আলু আমদানি হয়েছিলো এ স্টেশন দিয়ে। এছাড়াও গত তিন মাস ধরে পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শুধু সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ আর ফিড তৈরির কাঁচামাল খৈল আমদানি হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত বিষয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আমদানিকারক জানান, আলু-পেঁয়াজ দীর্ঘদিন আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে করে আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বো। সরকারের উচিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া।
অপরদিকে, দর্শনা রেলবন্দরে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন কম প্রবেশ করায় বন্দরের শ্রমিক, সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী ও সারাদেশ থেকে আসা ট্রাকচালক- হেলপাররা চিন্তার ভাঁজ কপালে ফেলেই সময় পার করছেন। আলু-পেঁয়াজসহ অন্যান্য মালামাল আমদানি না হওয়ায় কমেছে রাজস্বও।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে মালবাহী ওয়াগনে করে পণ্য আমদানি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। দ্রুত সময়ে আমদানি পণ্য খালাসের পর সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে যার যার চাহিদামতো সরবরাহ করা হয়। তবে দেশে নানা জটিলতার কারণে নানা কারণে আমদানি কমেছে এ বন্দর দিয়ে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক চাহিদামতো এলসি অনুমোদন না করায় পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। বিধায় রেল ইয়ার্ডে নেই আগের মতো কর্মব্যস্ততা। অল্প কিছু পণ্য আমদানি হলেও এতে কোনো লাভ হচ্ছে না তাদের। হিসাব মতো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় অনেক শ্রমিক ও ট্রাকচালক। আর আমদানিকারকরাও আছেন বিপাকে।
রেলবন্দরে থাকা কয়েকজন শ্রমিক ও ট্রাকচালক তাদের নাম না বলে জানান, কাজ না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে, যার সকল প্রভাব পড়ছে সংসারে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না আমাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, আগের সেই কর্মব্যস্ততা না থাকায়, শুয়ে-বসে দিন পার করাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তবে সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হোক বলে তিনি জানান।
দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিকুর রহমান আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মির্জা কামরুল হক জানান, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পণ্য আমদানি কমেছে। এতে রাজস্ব আদায়ও কমেছে। এখনো পর্যন্ত পণ্য আমদানি স্বাভাবিকপর্যায় আসতে পারেনি। কবে নাগাদ হতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন