চুরি করতে ঢুকে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকে মা ও মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চোর দল সংঘবদ্ধভাবে ওই গৃহবধূকে (৩০) ও তার মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নে চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি নতুন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী তিন সন্তানের জননী ও নির্যাতিত শিশু স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরকাজী মোখলেছ গ্রামে নতুন বাড়ি করেন একজন দিনমজুর। ওই বাড়িতে তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ বসবাস করতেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গেলে ২-৩ দিন পর বাড়ির বাইরে থাকতেন। গত দুই দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে যান। এ সময় বাড়িতে ওই গৃহবধূ তিন মেয়েকে নিয়ে ছিলেন। রাত ২টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে এক চোর। পরে সে ঘরের দরজা খুলে দিলে আরও দুইজনকে ভেতরে ঢোকায়। এরপর দুইজন পালাক্রমে ওই গৃহবধূকে এবং একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ওই গৃহবধূ ও মেয়ের র হাত-পা, মুখ বেঁধে ঘরে থাকা স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। গভীর রাতে ওই গৃহবধূর শিশু সন্তানদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তার বাঁধন খুলে দেয়। বিষয়টি চরজব্বার থানায় অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, সিঁধ কেটে একজন ঘরে ঢুকে দরজা খুলে দিলে বাকি দুইজনও ঘরে ঢোকে। পরে তারা আমাকে ও আমার মেয়ের হাত-মুখ বেঁধে ফেলে এবং নির্যাতন চালায়। যাওয়ার সময় স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমি মধ্যে দুইজনকে চিনি। তারা হলেন মুন্সী মেম্বার ও গরু ব্যাপারী হারুন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামী বলেন, আমি দিনমজুর। কাজের জন্য একেক দিন একেক এলাকায় থাকি। গতকাল আমি বাড়িতে ছিলাম না। গভীর রাতে তিনজনের সংঘবদ্ধ দল সিঁদকেটে ঘরে ঢুকে আমার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে। ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী ও মেয়ের নাকফুল-কানের দুলসহ নগদ ১৭ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আমি তাদের শাস্তি চাই।
চরজব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছায়। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর পর্যন্ত পুলিশ ওই স্থানে ছিল। সকালে ভুক্তভোগীদের থানায় আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে এবং আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, গতরাতের অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায় সন্দেহভাজনদেরকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে। অপরাধীদের এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না। আশা করি খুব দ্রুত এই বিষয়ে সুখবর দিতে পারব। আমাদের একাধিক টিম এ ঘটনায় কাজ করছে।
উল্লেখ্য, সুবর্ণচর উপজেলাটি গণধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গত সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন