চুয়াডাঙ্গায় রোজা আসার আগেই নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা
সারাদেশের মতো দ্রব্যাদীর সঙ্কট তেমন একটা না থাকলেও দামের বৃদ্ধির বেলায় ঠিকই তৎপর রয়েছে চুয়াডাঙ্গার মুদিসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যবসায়ীরা।
সামনে আসছে রমজান। মুসলিম ধর্মের গুনাহ মাফের অন্যতম গাম্ভীর্যপূর্ণ একটি মাস। এ মাসে ধর্মীয় কার্যক্রম মানতে বেশির ভাগ মানুষই যেমন রোজা পালন করে তেমনী ঈদুল ফিতরকে ঘিরে বাড়তি খরচও বাড়ে মানুষের। অথচ এই মাসেই বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি নিয়ে থাকে।
এদিকে, পিছনের দিনগুলির দিকে তাকালে দেখা যাবে। সেসময় মানুষের যেমন আয় কম ছিল তেমন জিনিসপত্রের দামও ছিল হাতের নাগালে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর প্রতিটা দিনের মত কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি রমজান মাসেও। এখন সেসব নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আয়ের পরিধি না বাড়লেও লম্বু গাছের মত বেড়েই চলেছে জিনিসপত্রের দাম। ফলে দামের ভাড়ে দিন দিন খাটো হয়ে পড়ছে মানুষ। তাই প্রতিটি দিন এখন ওইসকল মানুষের কাছে আতঙ্ক, অশান্তি ও স্তব্ধময়। বর্তমানে সকল জিনিসের দাম সরকারীভাবেও ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় সংসারের খরচ মেটাতে যেন ঘুম হারাম হচ্ছে অসহায় গরীব নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের। যেসব মানুষগুলো করোনার আগেও ২০১৯ সালের প্রতিটি দিন সহজভাবে পার করেছে। এখন সেইসব মানুষগুলোর জীবনযাপন যেন কাঁটা ঘায়ে লবণ ছেটানোর মত। প্রয়োজনের তুলনায় সংসারে খোড়াক মেটাতে অভিভাবকরা ব্যর্থ হওয়ায় তৈরী হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল। অনেক সন্তানদের লেখাপড়ায়ও পড়ছে ভাটা।
এদিকে, রমজান মাস আসতে প্রায় এক মাসের মত বাকী রয়েছে। আর সেজন্য বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রমজান মাসে কোনো জিনিসের দাম বাড়ানো যাবেনা মর্মে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সরকারকের কাছে সাধু সাজতে চুয়াডাঙ্গার বড়বাজারসহ সকল বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীরা অপকৌশল তৈরী করেছে। সরকারকে ভূগোল বানিয়ে রমজান মাসে দাম বাড়ার কথা পত্রপত্রিকায় যেন না আসে সেজন্য রমজানের এক মাস আগে থেকেই সকল জিনিসের দাম বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। (২৭ ফেব্রুয়ারী) সোমবার বাজার ঘুরে এমনটিই প্রমাণিত হয়েছে।
অথচ বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিকসহ নানা সঙ্কটাপন্ন থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জেলা বা দেশেই উৎপাদন হয় বেশি। তারপরও কোনসময় দ্রব্যমূল্যের স্থিতি থাকে না বাজারে। এছাড়াও রমজানে সকল জিনিসপত্রের দাম না বাড়ানোর কথা উল্লেখ করলেও সরকারের কথা কর্ণপাত না করে আগেভাগেই বাড়িয়ে তুলেছে জিনিসের দাম। আর সেসব কারণেই গরীব নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মাঝে অভাবী পরিবেশ সৃষ্টি করছে ব্যবসায়ীরা।
আগে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের যেমন আয় কম ছিল তেমন দ্রব্যমূল্যের দামও ছিল হাতের নাগালে। রাত পোহালেই চিন্তা করতে হয়নি সংসারে খরচের কথা।
২০২১ সালের ২৪ মার্চ মাসের পর থেকে বারবার করোনার কষাঘাত আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানী তেলের দাম সমন্বয়ভাবে যতটা না বেড়েছে। সুযোগ পেয়ে তার চেয়ে চুয়াডাঙ্গার বড়বাজারসহ শহরের সবকটি বাজারেই চাল ডাল, তেল, চিনি, মাছ-মাংসের বাজারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যা উপরোক্ত সকল পণ্যই জেলাসহ দেশেই উৎপাদন হয়ে থাকে। তারপরও নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে তোলায় মানুষ দিন দিন দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে। রমজানকে সামনে রেখে খাদ্য বিভাগ ও ভোক্তা অধিকার প্রতিনিয়ত তদারকি কার্যক্রমের মধ্যেদিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে সরকারী মূল্যে পণ্য বিক্রি করে সেবিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে ক্রেতা সাধারণ। সে হিসেবে যদি দোষী প্রমাণিত ব্যবসায়ীদেরকে জেল জরিমানার মেয়াদ বাড়ানো যায় তাহলে তাদের দেখে হারিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীনীতি থেকে যেমন ফিরে আসবে ব্যবসায়ীরা তেমনী সাধারণ জনগণও জীবনযাপনে স্বস্তি পাবে।
মুসলিম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রমজান মাস। আর এ রমজান মাসকে ঘিরে প্রতিবছরই বিশেষ করে মুদি ও পোশাক ব্যবসায়ীসহ সকল প্রকার ব্যবসায়ীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় সরকার নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে চাপা সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে জিনিসের দাম বাড়িযে বাজারকে উত্তপ্ত করে তোলে। এতে ভোক্তারা সারা মাসের চেয়ে আরও বেশি বিপাকে পড়ে রমজান মাস আসলেই। সেলক্ষ্যে সরকার রমজান মাসে কোনো জিনিসপত্রের দাম না বাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও এবার সেসব সিণ্ডিকেট ব্যবসায়ীরা রমজান আসার একমাস আগেই জিনিসপত্রের দাম আস্তে আস্তে বাড়িয়ে তুলেছে। এতে করে সাধারণ ক্রেতা সাধারণ এখনই বিপদের মধ্যে পড়েছে। সামনে রমজান মাসে যদি আবারও জিনিসের দাম বাড়িয়ে তোলে। তাহলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাপনে ভয়াবহতা তৈরী হবে। সে বিষয় লক্ষ্য রেখে বাজার মনিটরিংয়ে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা জরুরী বলে মনে করছে সাধারণ ক্রেতারা।
এদিকে গোপন সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে কোন প্রকার দোষ যাতে না পড়ে সেজন্য এমন অপকৌশল ব্যবসায়ীরা তৈরী করেছে। ফলে সাধারণ জনগণ এখনওই কাবু হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। এছাড়াও রোজার মাসে জিনিসের দাম আরও কত বৃদ্ধি হতে পারে সে চিন্তাই জড়ো হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সে মোতাবেক এক মাসের ব্যবধানে চাল মৌসুমেও যে সততা মিনিকেট চাল ছিল ৬৭ টাকা সেই চাল এখন ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি বেশি মুনাফার আশায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলা হয়েছে।
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একমাসের ব্যবধানে গতমাসে সয়াবিন তেল ছিল ২০০ টাকা কেজি বর্তমানে ২৪০ টাকা। গতমাসে বেষম ছিল ৭১ টাকা কেজি বর্তমানে ৭৫ টাকা কেজি, রমজান মাসের ইফতারের প্রধান খাদ্য খেজুর গতমাসে কেজি ছিল ১৫০ টাকা বর্তমান কেজি ২৫০ টাকা, গতমাসে চিনির কেজি ছিল ৮৫ টাকা বর্তমান তা বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। আগে গরম মশলা কেজি ছিল ১২০০ টাকা বর্তমানে বেড়ে ১৭০০ টাকা করা হয়েছে। গতমাসে ডিমের খাঁচি ছিল ২৮৫-২৯০ টাকা বর্তমানে এক খাঁচি ৩৩০-৩৪০ টাকা করা হয়েছে। গতমাসে পোল্ট্রি মুরগির কেজি ছিল ১৪৫ টাকা বর্তমানে কেজি ২৩০ টাকা। গতমাসে লেয়ার মুরগি কেজি ছিল ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা বর্তমান ৪৫০ থেকে ৪৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গতমাসে সোনালী মুরগির কেজি ছিল ২০০ টাকা বর্তমানে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতমাসে দেশি মুরগির কেজি ছিল ৩৩০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। গতমাসে প্যারেস মুরগির কেজি ছিল ৩৯৫ টাকা বর্তমান তা বেড়ে ৪৭০ টাকা কেজি করা হয়েছে। গতমাসে গরুর মাংস কেজি ছিল ৬০০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৭০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গতমাসে খাসির মাংস কেজি ছিল ৭৫০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ১০০০ টাকা কেজিতে দাঁড়িয়েছে। যা সবকিছু চুয়াডাঙ্গায় বা দেশেই তৈরী হয়। তারপরও এসব পণ্যের দাম বাড়ায় বিশেষ করে রমজানকে ঘিরে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাদের ভাষ্যমতে এভাবে মাসে মাসে দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ জনগণ তিনবেলার মধ্যে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন বাজারে আসা অনেক ক্রেতা। এটা সরকারপক্ষ বাজার মনিটরিং নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলেও মনে করছেন তারা।
বাজার করতে আসা স্বল্প আয়ের চাকরীজীবি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি গত মাসেও পোল্ট্রি মুরগি ১৪৫ টাকায় কিনেছি আজকে সেই মুরগি ২৩০ টাকা করে নিল।
আরেক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার তো আমাদের কথা ভাবেনা। ভাবলে বাজার জনগণের সাধ্যমত থাকতো। এখন বাজারে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মনে হয় সরকার শুধু ব্যবসায়ীদের ভোটে পাস করে জনগণের ভোটে নয়। এভাবে দিন দিন দাম বাড়ানো অমানবিক ছাড়া কিছুই নয়। এদিকে সরকারের কঠোর নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে ক্রেতা সাধারণ।
আরেক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটা রাষ্ট্র জনগণের স্বার্থেই চলে এবং চলা উচিত। কিন্তু এদেশে জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া হয়। আয় বৃদ্ধি না হলেও জিনিসের দাম বাড়াতে একফোটাও চিন্তা করেনা এদেশের জনগণ চলতে পারবে কী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন