চুয়াডাঙ্গায় সরকারী গাছ বিক্রির অভিযোগ পদ্মবিলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
সরকারী নিয়ম না মেনে প্রকাশ্যে গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম মন্ডলের বিরুদ্ধে।
নিয়ম মাফিক টেন্ডার, বন বিভাগ থেকে মূল্য নির্ধরাণীসহ বিজ্ঞপ্তি-প্রচারণার মাধ্যমে গাছ কাটার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকারকে উপেক্ষা করে মোমিনপুর ইউনিয়ন (ভূমি) অফিসের সামনে ও পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে দীর্ঘ বছরের পুরনো শীল কড়ই, লম্বু আর ভেটুল গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়রা বলছে, পানির দামে বিক্রি করা হয়েছে দামী দামী ওইসব বড় বড় সরকারী গাছ। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী অভিযোগের তীর ইউপি চেয়ারম্যান আলম মন্ডলের দিকে। কিন্তু চেয়ারম্যানের দাবী, নিরাপত্তাজনিত কারণে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছগুলো। গাছ কাটার পর তা সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রায় ১০দিন ধরে দিনের আলোতেই নির্বিঘ্নে চলছে গাছ কাটার কার্যক্রম। এতেই ধারণা করা যায় রাতের অন্ধকারে সরকারের আরও কত সম্পদ নষ্ট করতে পারে তা স্থানীয়দের মনে বিরূপ মন্তব্য চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে ওপেন টেন্ডার, বন বিভাগ থেকে গাছের মূল্য নির্ধারণী এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ মাইকিং প্রচারণার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা না করে ৪০টির মত বিভিন্ন ধরনের বড় বড় গাছ কাটার ক্ষেত্রে কোন নিয়মই মানা হয়নি। শুধুমাত্র পরিষদের সদস্যদের নামমাত্র রেজুলেশনের বলে এসব গাছ কাটা শুরু হয়।
সেসব সরকারি ৪০টি গাছ ৩ লাখ ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় পাশ্ববর্তী ডিঙ্গেদহ গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে নাসির উদ্দীনের কাছে। এজন্য তাকে গাছ কাটার অনুমতিপত্র প্রদান করে পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আলম মন্ডল ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ রবিউল আলম।
অনুমতি পত্রে উল্লেখ করা হয়, ৭নং পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের সীমানার মধ্যে কিছু সংখ্যক ভেটুল গাছ, লম্বু গাছ ও কড়ই গাছ আছে। গাছগুলো বিভিন্ন ভবনের জন্য ক্ষতিকারক মনে করাই ইউপি সদস্যগণ, মোমিনপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতিক্রমে সর্বোচ্চ দরদামে নাসির উদ্দীনের নিকট ৪০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তাই চেয়ারম্যান কর্তৃক গাছ কাটার অনুমতি প্রদান করা হলো।
এদিকে, গাছগুলোর দাম ৬/৭ লাখ টাকার উপরে হতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। এতে করে দেশের এই দুঃসময়ের মধ্যে সরকারী সম্পদ নিয়মমাফিক বিক্রি না করে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন আরও জানায়, লম্বু ও ভেটুল গাছগুলো ১৮-২০ বছর ধরে দেখছি। আর শীল কড়ই গাছ দুটির বয়স ৪০ এর বেশী। হঠাৎ এসব গাছ এখন কাটা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের পুরনো এসব গাছের মধ্যে মাত্র ৩ লাখ টাকা হতেই পারে না।
এ বিষয়ে পদ্মবিলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিভাবে গাছকাটার প্রক্রিয়া হয়েছে আমরা জানিনা। চেয়ারম্যান-সচিব নিজেরাই একক ক্ষমতাবলে এসব কাজ করছে। আমাদের কথার কোন দাম নেই। সাবেক ইউপি সদস্য সেলিম মল্লিক ছলিম বলেন, আমরা হঠাৎ করেই দেখছি গাছ কাটা হচ্ছে। এর আগে আমরা কিছুই জানতাম না। অথচ নিয়ম হচ্ছে গাছ কাটার জন্য ওপেন টেন্ডার করতে হবে, প্রচারণা চালাতে হবে। যদি সেসব নিয়ম মানা হতো আমরা বিষয়টি জানতে পারতাম।
স্থানীয় ব্যবসায়ী বজলুর রহমান জোয়ার্দ্দার জানান, সেখানে গাছ রয়েছে ৪০টিরও বেশী। আর এতগুলো গাছের দাম মোটেও ৩ লাখ টাকা হতে পারেনা। পানির দামে গাছ বিক্রি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আলম মন্ডলের পরিষদ কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তিনি অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গাছগুলেরা জন্য আশপাশের ভবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই পরিষদের সদস্যদের নিয়ে রেজুলেশন করে ইউএনও’র মৌখিক অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই গাছ বিক্রি করা হয়। সরকারি গাছ সরকারি উন্নয়ন কাজেই ব্যবহার করা হবে। গাছ বিক্রির টাকা দিয়ে পরিষদের সাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে।
জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম জানান, গাছ বিক্রির জন্য বন বিভাগের কেউ মূল্য নির্ধারণ করেনি। বিষয়টি তাদের জানা নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া জানান, রেজুলেশনের পর ইউনিয়ন পরিষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাছা কাটা শুরু হয়েছে বলে জানি। তবে এর মধ্যে কোন অনিয়ম আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন