চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নেই নার্স; অসহায় স্বজনরা
সঠিকভাবে পরিপূর্ণ সেবা না দেয়াসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরঞ্জাম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়েই চলছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। পূর্বের অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে গত তিনদিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে কোনো শিক্ষানবিশ নার্সদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, হঠাৎ করে আবহাওয়া বদলের কারণে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত তিনদিনে ১১৪ জন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন বয়সের। রোগীর তিনগুণ চাপ বাড়ায় শিশু ওয়ার্ডের আসন ছাড়িয়ে হাসপাতালের বারান্দা চলাচলের পথসহ এমনকি রোগী নামানোর ঢালু সিঁড়িতেও বিছানাগত হয়েও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের। এদের মধ্যে এক থেকে দুই বছর বয়সের শিশুরাই বেশি।
এছাড়াও কলেরা স্যালাইনসহ বিশেষ প্রয়োজনীয় অক্সিজেনও পাওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালে। বিধায় বাধ্য হয়ে বাইরের ফার্মেসী থেকে টাকা দিয়ে স্যালাইন ও অক্সিজেন দিতে হচ্ছে অসহায় গরীব পরিবারের শিশু রোগীদের।
বিভিন্ন রোগীর ম্বজন সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে কোনো শিক্ষানবিশ নার্সরা রোগীদের সেবা দিতে আসছে না। আবার একজন স্টাফ নার্স দিয়ে সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেনা শিশু ওয়ার্ডের রোগীরা। তিনগুণ রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডিউটিরত একজন নার্স। সারাদিন রাত মিলে একবারের বেশি দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা ডাক্তারও। তবে গত তিনদিন ধরে শিক্ষানবিশ নার্সরা রোগীদের সেবা দিতে কেন আসছে না তা রোগীর স্বজনরা ছাড়াও কোনো সদুত্তোর দিতে পারছে না দায়িত্বে থাকা স্টাফ নার্সও।
ফলে সঠিক সেবা না পেয়ে অনেক স্বজনরা তাদের শিশু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরের কোনো ক্লিনিক ছাড়াও ভর্তি হচ্ছে আশপাশের জেলায়। এতে করে যেমন বাড়তি টাকা খরচসহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গরীব অসহায় রোগীর স্বজনদের তেমনী তাদের কাছে সরকারকে বদনামের ভাগিদার বানাচ্ছে শিক্ষানবিশ নার্সরা। গত তিনদিন ধরে এমন অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলেও কোনো মাথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তাদের।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) রাতে শিশু ওয়ার্ড ঘুরে জানা গেছে এমন করুণ তথ্য।
শিশু ওয়ার্ডের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, টানা তিনদিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে ইন্টার্নি কোন নার্স ডিউটি করছে না। যেখানে প্রতিদিন চার জন শিক্ষানবীশ নার্স ডিউটি করতো তারা কেউই ওয়ার্ডে আসছে না। তাই একজন নার্স দিয়ে এত রোগী সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য চিকিৎসা সেবা অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া যারা আয়া হিসেবে কর্মরত আছে তাদেরও কোন দেখা নেই গত তিনদিন ধরে।
এ ব্যাপারে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন সেলিম রেজা অভিযোগ করে বলেন, গত দুদিন ধরে আমার বাচ্চাকে নিয়ে ভর্তি আছি। দিনে একবার ছাড়া দু’বার ডাক্তারের দেখা পাচ্ছিনা। আবার হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দিচ্ছে না। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে। নার্সদের ডাকলেও সময়মতো তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি না।
আরেক শিশুর মা তাবাচ্ছুম বেগম জানান, শিশু ওয়ার্ডে অক্সিজেন পাচ্ছি না। শিশুর জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও হাসপাতাল থেকে তা দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই বাইরের ফার্মেসীর দোকান থেকে অসুস্থ শিশুকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
ওয়ার্ডের এমন করুণ দুরাবস্থা পরিত্রাণের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান ও আরএমও ডা. ফাতেহ আকরামকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা কোনো রকম ফোন রিসিভ করেনি। এহেন পরিস্থিতিতে রোগীর স্বজনরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন