সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে

চোখের সামনে যমুনা নদীতে বিলীন প্রায় সাড়ে ৪শত বাড়ীঘর

যমুনায় পানি বৃদ্ধি ও উজানের ঢলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নের ভেকা, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ও পাকুরতলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘরসহ এই চার গ্রামে অন্তত সাড়ে ৪শতটি বাড়িঘর যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নদী তীরে ভাঙ্গণ ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার পাকুরতলা (আশ্রয়ণ) প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

অপরদিকে গালা ইউনিয়নের মার্জান ফকির পাড়া গ্রামের ঈমান মোল্লার ছেলের টেক্কা’র ৪টি ঘরসহ পুরো বসতভিটা গভীর রাতে হঠাৎ করেই যমুনা নদীতে ধ্বসে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব পরিবার আশ্রয়স্থল হারিয়ে নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে গরু ছাগল এবং শিশুদের নিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে কেউ অন্যের বাড়িতে এবং বাধের উপরে আশ্রয় নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। এপযর্ন্তও কোন সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পৌছায়নি বলে জানান ভাঙ্গনকবলিত মানুষ।

এ বিষয়ে জালালপুর গ্রামের ভাঙ্গনকবলিত রহম মোল্লা, রজব আলী, বাবু মিয়ার সাথে কথা হলে তারা বলেন, গত দিনদিন হলো আমাদের বাড়ীঘর নদীর মধ্যে চলে গেছে। নদীর ধারেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোনরকমে দিন কাটাচ্ছি। কোন নেতা বা চেয়ারম্যান মেম্বর কেউ কোন সাহায্যে সহযোগিতা নিয়ে আসেনি। গত এক সপ্তাহে আমাদের এই জালালপুর আর পাকুতলা গ্রামের প্রায় ৩/৪ বাড়ীঘর নদীতে গেছে। সকলেই খুব কষ্টে আছি।

জালালপুর ১নং ওয়ার্ডের মেম্বর মহির উদ্দিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়-বৃষ্টির সময় যমুনা নদীতে প্রচন্ড ঢেউ শুরু হয়। এতে মূহুর্তে যমুনা পাড়ের ২৫টি বাড়িঘর রাতের অন্ধকারে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জীবন নিয়ে সবাই বাড়িঘর থেকে বের হতে পারলেও অনেকেই জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেননি। চোখের সামনে যমুনা নদীতে তলিয়ে গেছে। তখন থেকে তারা খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। বাড়ীঘর হারিয়ে দিশেহারা এসব মানুষ এখন জনপ্রতিনিধিদের কাছে সাহায্যে সহযোগিতা চাইছে।

এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুলতান মাহমুদ বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গত ৭/৮দিনে আমাদের ভেকা, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ও পাকুরতলা গ্রামের প্রায় ৪/৫শত বাড়ীঘর যমুনা নদীতে ভেঙ্গে গেছে। এরমধ্যে পাকুরতলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩টি সেডের ৩০টি ঘর ভিটেসহ নদী চলে গেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য দ্রুত সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন সাহায্য সহযোগিতা হাতে পাওয়া যায়নি। পেলে তাদের মাধ্যে বিতরণ করা হবে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গণ রোধে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে তাদের সাহায্য সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ইতোমধ্যে ২০ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্দ এসেছে। যা দুই একদিনের মধ্যেই ভাঙ্গনকবলিত কয়েকটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। পরে তাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন করা হবে।