চৌহালীতে ভুয়া প্রকল্প; রাজস্ব খাতের কাজ না করেই সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন
ভুয়া নামে প্রকল্প। হয়নি কাজ, অর্থবরাদ্দের খবরই জানেনা প্রকল্প সভাপতি। কিন্তু একটি চক্র ঠিকই অর্থ পকেটস্থ করেছেন। এমন ভুতুরে নামে উন্নয়ন দেখিয়ে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার রাজস্ব খাতের সাড়ে ১৪ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ফারুক সরকার এবং বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে ইউএনও বলছেন একটু ধোর্য্য ধরুন সরকারী অর্থ কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না, কাজ করতেই হবে। না হলে গ্রহন করা হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ চৌহালী উপজেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এমন তালিকা হাতে এসেছে সংবাদকর্মীদের কাছে। প্রকল্প গুলো ঘুরে দেখা যায় অস্তিত নেই এমন নাম স্বর্বস প্রকল্প দেখানো হয়েছে। এনিয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখা যায় পুকুর চুরির ঘটনা। উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও কার্যালয় সুসজ্জিত করণের নামে ২লাখ টাকার একটি প্রকল্প কমিটির সভাপতির করা হয় স্থল ইউনিয়নের সদস্য সেলিম নামে একজনকে। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে এ নামে কোন ইউপি সদস্য নাই স্থল ইউনিয়নে।
এছাড়া অন্যান্য প্রকল্প গুলো হচ্ছে- উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এসি ও চেয়ার সরবরাহ, উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে পর্দা ও টেবিল সরবরাহ, উপজেলা শিক্ষা সমিতির ভবন মেরামত, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য কম্পিউটার সেট ক্রয়, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ার পর্দা ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী সরবরাহ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন মেরামত ও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সামগ্রিক ক্রয় নামের ৮ টি প্রকল্পের নাম রয়েছে। এর অনুকুলে রাজস্ব খাতে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের কমিটিতে বিভিন্ন ইউপি সদস্যদের নাম দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অবগত নয় স্থল ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছালমা জাহান, খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন। তারা জানান প্রকল্পের কথা বলে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি চেক নিয়েছে। তার পর আর সেই প্রকল্পের সম্বন্ধে কিছুই জানানো হয়নি।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সুসজ্জিত করণ প্রকল্পের সভাপতি স্থল ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া।
এবিষয়ে জানতে স্থল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। স্থল ইউনিয়নে সেলিম মিয়া নামের কোন ইউপি সদস্য নেই। এছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এখন পযন্ত আনষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়নি। তারপরও সংস্কার কাজ দেখিয়ে দেড় লাখ টাকার প্রকল্প দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সুসজ্জিত করণে ২লাখ টাকা ব্যায় দেখানো হলেও ছবি ঝুলানোর বোর্ড ছাড়া কোন কাজই করা হয়নি। উপজেলা সভা কক্ষে এসি লাগাতে ২লাখ টাকা ব্যায় দেখানো হলেও এখনো কোন এসি লাগেনি। উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার পরিছন্ন সামগ্রী সরবরাহ বাবদ ২ লাখ ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার সেট ক্রয় বাবদ ২ লাখ টাকার প্রকল্প দেওয়া হলেও সেটার সঠিক ব্যবহার হয়নি।
নিয়মানুযায়ী (২০২২-২৩ অর্থ বছরে) প্রকল্পের কাজ শেষ করে টাকা উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তলন করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ সহ সকল দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে খাষকাউলিয়া পশ্চিম জোতপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তবে তৎকালীন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত সময়ে সকল প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার বলেন, অভিযোগ মিথ্যা। সময় স্বল্পতার কারণে জুনের আগে কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প গুলির কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুতই কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন হবে।
এদিকে চৌহালী উপজেলার ইউএনও মাহবুব হাসান জানান, আমি যোগদানের আগে এ প্রকল্প গুলো নেওয়া হয়েছে। খোজ খবর নিচ্ছি। সরকারী অর্থ কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন