চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ
অসাধারণ, অতুলনীয়, অপরাজেয়! এই উপমাগুলোও রিয়াল মাদ্রিদের জন্য কম হয়ে যায়। একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় যেকোনো ক্লাবের কাছে যেখানে স্বপ্নের মতো সেখানে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়, বোধহয় স্বপ্নেরও বেশি কিছু করে ফেলছে জিনেদিন জিদানের দল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর ইউরোপের বড় মঞ্চে কোনো দলই পারেনি টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছিল তারা। এবার যেন সেটিকেও ছাড়িয়ে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হলো রিয়াল মাদ্রিদ। ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে নিজেদেরকে অন্য সবার থেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যায় জিদানের দল। ফাইনালে রিয়ালের হয়ে জোড়া গোল করে নায়ক বনে যান ওয়েলশ তারকা গ্যারাথ বেল।
দু’দলের মাঠের উত্তাপ ছাপিয়ে ম্যাচের আকর্ষণ অনেকটা কমে যায় লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ এবং রিয়াল মাদ্রিদের রাইট ব্যাক দানি কার্ভাহালের ইনজুরিতে। ম্যাচের ২৭ মিনিটে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে কান্নায় মাঠ ছাড়েন সালাহ। এর ঠিক ১২ মিনিট পর রিয়াল মাদ্রিদের কার্ভাহাল ইনজুরিতে পড়েন। তিনিও কান্না ভেজা চোখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। তবে দুজনের বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা ম্যাচ পরবর্তী পরীক্ষার পরেই জানা যাবে।
প্রথম থেকেই রিয়াল মাদ্রিদকে বেশ চেপে ধরে লিভারপুল। ম্যাচের ১৬ মিনিটে রোনালদোর বুলেট গতির শট গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। ২৩ মিনিটে পরিকল্পিত এক আক্রমণ থেকে সালাহর কাছ থেকে বল পেয়ে আলেক্সান্ডার আর্নল্ডের দূর পাল্লার মাটি কামড়ানো শট দুর্দান্ত ভঙ্গিমায় রুখে দেন নাভাস। এরপরেই লিভারপুল শিবিরে নেমে আসে হতাশা। রাজ্যের অন্ধকার দেখা যায় ইয়ুর্গেন ক্লপের চোখেমুখে। তার অবস্থা এমন হবেই বা না কেন। ২৭ মিনিটে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন লিভারপুলের প্রধান খেলোয়াড় মোহামেদ সালাহ।
সালাহর ইনজুরির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ইনজুরি। এবার রিয়াল মাদ্রিদের রাইট ব্যাক দানি কার্ভাহাল। তিনিও সালাহর মতো চোখের জলে মাঠ ছাড়েন। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন নাচো। প্রথমার্ধে আর কোনো দল তেমন আক্রমণ করতে না পারলে গোলশূন্য থেকে বিরতিতে যায় দু’দল।
বিরতি থেকে ফিরে খোলস ছেড়ে বেরুতে থাকে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ৪৮ মিনিটে ইস্কোর দূরপাল্লার শট গোলবারে লেগে ফিরে আসলে আশাহত হয় জিদানশিষ্যরা। ৫১ মিনিটে এক তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন লিভারপুল গোলকিপার কারিউস। রিয়াল মাদ্রিদের এক ফুটবলারের দেওয়া লং পাসটি নিজের তালু বন্দি করার ঠিক পরপরই সেটিকে হাত দিয়ে সতীর্থদের কাছে পাঠাতে গিয়েই বাঁধালেন বিপত্তি। তার সামনেই থাকা রিয়াল স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার পায়ে লেগে সেটি গোলে পরিণত হলে অপ্রত্যাশিত গোল পেয়ে যায় মাদ্রিদ। লিভারপুল গোলকিপারের এমন কাণ্ডে হতভম্ব পুরো স্টেডিয়াম। ২০০২ সালের পর প্রথম ফ্রেঞ্চ ফুটবলার হিসবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল করলেন বেনজেমা।
গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকা লিভারপুল গোলও পেয়ে যায় ৫৫ মিনিটে। লভরেনের বাড়ানো বলে পা ছুঁয়ে সেটিকে গোলে পরিণত করেন সাদিও মানে। চতুর্থ আফ্রিকান ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল করলেন তিনি। ৬৩ মিনিটে ইস্কোর পরিবর্তে মাঠে নামেন গ্যারাথ বেল। নেমেই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে দেন গ্যারাথ বেল।
৬৪ মিনিটে মার্সেলোর বাড়ানো বল থেকে ডি বক্সের ভেতর বাইসাইকেল কিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের ইতিহাসে অন্যতম সেরা গোলটি করেন গ্যারাথ বেল। ৭০ মিনিটে গোলের সুযোগও পেয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু সাদিও মানের শট গোলবারে লেগে প্রতিহত হলে গোল বঞ্চিত হয় তারা।
ম্যাচের শেষ দিকে আরও একবার লিভারপুল গোলকিপারের ভুলে পিছিয়ে পড়ে লিভারপুল। ৮৩ মিনিটে গ্যারাথ বেলের দূরপাল্লার বুলেট গতির শট পাঞ্চ করতে গিয়ে নিজেদের গোলবারের ঢুকিয়ে দেন তিনি। ফাইনালের মঞ্চে জোড়া গোল করে ফাইনালটা স্মরণীয় করে রাখলেন এই ওয়েলশ তারকা। বাকি সময়ে আর গোল না হলে ৩-১ গোলের জয়ে নিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন