চ্যালেঞ্জের নির্বাচন কোন্দল বাড়াচ্ছে, কঠোর হবে আ’লীগ

আগামী নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দলটি। আর সেই বাধা পেরুতে প্রতিপক্ষের তুলনায় নিজের ঘরই বেশি ভাবাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মতবিরোধ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে দলটিতে। তৃণমূলের কোন্দল সামলাতে তাই কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।খবর পরিবর্তনের।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘নির্বাচনের আগে দলের মতবিরোধ কমাতে না পারলে তা নির্বাচনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেজন্যই দলের শীর্ষ নেতারা তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কমানোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন, তেমনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও বিভিন্ন জেলার নেতাদের ডাকা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এরমধ্যে নেতা অনেক, কর্মীর সংখ্যাও বেশি। আর আওয়ামী লীগের মত বড় দলে কমবেশি মত-পার্থক্য স্থানীয়ভাবে কিছুটা থাকতেই পারে।’

তবে এ ধরনের মতবিরোধ যে দলের নীতি-নির্ধারকদের ভাবাচ্ছে সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। আহমদ হোসেন বলেন, ‘মত পার্থক্যটা যাতে সাংঘর্ষিক রূপ না নেয় সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। আমরা সুস্থ প্রতিযোগিতাটাকে প্রমোট করি কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতাটাকে নিরুৎসাহিত করছি।’

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে এর আগেও বেশ কয়েকবার তৃণমূলে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরিমধ্যে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকায় দলের অন্তঃকোন্দল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আহমদ হোসেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে কিন্তু এসব একেবারে নতুন নয়। সর্বকালে সবখানে সব পার্টিতেই হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যেমন আছে, ভারতসহ সব দেশের ইতিহাসেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।’

তৃণমূলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মোটিভেট করার জন্য তাদের ডাকছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক পার্টির কার্যালয়ে তাদের ডেকে এনে উপদেশ দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা যে আর করা যাবে না, সেই বার্তাই আমরা দিচ্ছি।’

নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে অন্তঃকোন্দল বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে। সেই ইঙ্গিত দিয়ে আহমদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের উত্তাপ বাড়ছে। আর এই উত্তাপ যত বাড়বে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার বিষয়টি তত তীব্র হবে। কারণ কিছু পাওয়ার বিষয় থাকে। আর নির্বাচনের সময় এই বিষয়টি সামনে চলে আসে। একাধিক প্রার্থী থাকে, সেখানে নমিনেশন পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে। তবে আমরা যেটা করছি সেটা কন্টিনিউ রাখার চেষ্টা করছি, যাতে এটা সংঘাতে রূপ না নেয়।’

অতীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অনেককে ছাড় দেওয়া হলেও এবার সেই সুযোগ থাকছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আশা করছি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। আর যদি হয় তাহলে আমরা কঠিন পদক্ষেপই গ্রহণ করব।’

আর আওয়ামী লীগের এই কঠিন অবস্থানের কারণ হল দ্বন্দ্বের কারণে নির্বাচনে ভরাডুবির অভিজ্ঞতা। পৌরসভা, ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের মূলে ছিল দলীয় অন্তঃ কোন্দল। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ভরাডুবির প্রধান কারণ ছিল অন্তঃ কোন্দল। দলের নীতি-নির্ধারণী মহলে, ওই নির্বাচনে ব্যর্থতার জন্য দুইজনকে মন্ত্রীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলেও, শামীম ওসমানের ভূমিকা নিয়ে নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত নানা গুঞ্জন ছিল। নির্বাচনের বাইরেও তৃণমূলের অন্তঃ কোন্দল দলকে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বিভিন্ন সময়। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে আওয়ামী লীগকে বিতর্কে জড়িয়েছিল স্থানীয় দ্বন্দ্ব।

সম্প্রতি মন্ত্রী ছায়েদুল হকের সমাবেশকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিভক্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসিরের দ্বন্দ্ব সামলাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও।

আর এ ধরনের দ্বন্দ্ব আগামী নির্বাচনের ভোটে যাতে প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য সতর্ক আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত দলে মতভেদ, পছন্দ-অপছন্দ, কোন্দল-কলহ খুব একটা নতুন ব্যাপার না। এ ধরনের দলের জন্মলগ্ন থেকেই মতভেদের একটা বিষয় থাকে। এখনো যে বিষয়টি নাই সেটা বলবো না, অবশ্যই আছে। এখানে আমাদের দায়িত্বটা হচ্ছে এই দূরত্বটা যত কমিয়ে আনা যায়।’

আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে এবারের নির্বাচনটাকে নিয়েছি। এক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেই যাবে, সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন; তার আর দলে থাকার সুযোগ থাকবে না। এ ধরনের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত আছে আমাদের, এ ব্যবস্থাটা থাকবে।’

কিন্তু এর আগেও কঠিন সিদ্ধান্তে তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি, ফলে এ সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক কৌশল আমাদের অবলম্বন করতে হয়। তার অর্থ এই নয় যে, নিজের ঘরে কুড়াল যারা মারবে; তাদের সেই ঘরে আর থাকার সুযোগ থাকবে।’