ছাত্রদলে এখন সবাই নেতা, কর্মী পাওয়া দুষ্কর
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে এখন সবাই নেতা। ফলে ছাত্রদলে এখন কর্মী-সমর্থক খুঁজে পাওয়া যায় না। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কিংবা গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে যাদের সঙ্গে দেখা হয়, তারাই বলছেন, ‘আমি অমুক পদে আছি। সামনে সুপার ফাইভে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। ’ সর্বশেষ জুয়েল-হাবিব কমিটিও ছিল ২৯৪ সদস্যের। এর আগে টুকু-আলিম কমিটি ছিল ১৭১ সদস্যের। সেখান থেকে এক দৌড়ে কমিটি দেওয়া হয় ৭৩৬ সদস্যের। তবে ঢাউস কমিটি হলেও মিছিল-মিটিং কিংবা দলীয় কর্মসূচিতে দেখা মিলে না অধিকাংশেরই। মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদলের বর্তমান সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও স্থবির প্রায়। দাবি উঠেছে, ছোট পরিসরে নতুন কমিটির।
জানা যায়, ঈদের পর ছাত্রদলের নতুন কমিটি আসতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সহসভাপতি কিংবা যুগ্ম সম্পাদক পর্যায় থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে অনেকেই আপত্তি করছেন, সহসভাপতি পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই বিবাহিত। সর্বশেষ ছাত্রদল তিতুমীর সরকারি কলেজ শাখার কমিটি দেওয়া হয় ৬৩৯ সদস্যের। এরও কিছুদিন আগে ঢাকা কলেজ শাখার কমিটি দেওয়া হয় ৬৮৭ সদস্যের। একইভাবে মহানগর উত্তর শাখার কমিটিও ছয় শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। সেখানেও ঢাউস কমিটি হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকেই ছাত্রদলের কমিটির কলেবর বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজ শাখার কমিটি হয় না ১৬ বছর ধরে। সেখানে একটি জট পড়ে আছে। এ কারণেই অনেককে জায়গা দিতে হয়েছে। ’ নবঘোষিত তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রদলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, ‘এত বিশাল কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি না হয়ে ছোট পরিসরের কমিটির সদস্য পদ পেলেও নিজেকে গৌরবময় মনে করতাম। কারণ, যাদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে তাতে নিজের পরিচয় দিতেও বিব্রতবোধ করছি। ’ সভাপতির দায়িত্বে থাকা সাবেক এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘এখন এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, সহসভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকীয় পদ বা সদস্য পর্যায়ে একজন আরেকজনকেই চেনেন না। ’ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে অবশ্য ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। রাজীব-আকরাম কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর। প্রায় ৮ মাস ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটি। তবে ঢাউস কমিটি করলেও এখন সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির প্রায়। ১০৩টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১৪টিতে কমিটি দিতে পেরেছে নতুন কমিটি। কোনো মিছিল মিটিংয়ে নেতা-কর্মীদের দেখাই মেলে না। নয়াপল্টন কার্যালয়েও দেখা যায় না নেতাদের। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি প্রসঙ্গে রাজীব আহসান বলেন, ‘যেদিন কমিটির মেয়াদ শেষ হয় তা বিএনপির হাইকমান্ডকে আমরা অবহিত করেছি। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চাইলে যে কোনো সময় আমি ছাত্রদল ছাড়তে প্রস্তুত। ’ সর্বশেষ গত রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১৫-২০ জন নেতা-কর্মীর একটি ‘ঝটিকা’ মিছিল হয়। সেখানে সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। শুধু মহাসচিবই নন, খোদ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কিংবা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা-গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও একই অনুপস্থিতির চিত্র দেখা যায়।
ছাত্রদলের সাবেক একাধিক নেতা জানান, ঢাউস কমিটি দিয়ে ছাত্রদলের ইতিহাস-ঐতিহ্য সব নষ্ট করা হয়েছে। এতে ছাত্রদলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তা ছাড়া নেতৃত্বের মানও কমে যাচ্ছে। অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রদল গঠনের সময় কাজী আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পরবর্তীতেও ধারাবাহিকতা ছিল। যা এখন হোঁচট খেয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি বিএনপির হাইকমান্ডও ক্ষুব্ধ। সর্বশেষ চেয়ারপারসনের এক নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের ঘটনায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে বকাঝকা করেন বেগম খালেদা জিয়া। ছাত্রদলের চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে লন্ডনে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানও সন্তুষ্ট নন বলে জানা গেছে। তাই তিনিও চান ঈদের পর ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব। সূত্রমতে, বেগম খালেদা জিয়া ঈদের পর লন্ডন যাবেন। সেখানে মূল দলের পাশাপাশি ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলবেন তারেক রহমান। তা ছাড়া ছাত্রদলের শীর্ষ তিন নেতা রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান ও মামুনুর রশীদ মামুনকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির পদ দেওয়া হয়েছে। তাদের তিনজনই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেও আগ্রহী। তাই দ্রুত তাদের ছাত্রদল থেকে সরিয়ে মূল রাজনীতিতেও নিয়ে যাওয়া উচিত বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি হলেও কোনো গতি পায়নি। বিশ্ববিদ্যায় শাখার শীর্ষ নেতৃত্বেও দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্যে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের অবস্থা বেহাল। সেখানে ৯২ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়েই মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। জগন্নাথ শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ও সাধারণ সম্পাদক আসিফ রহমান বিপ্লব একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক কাউসার আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির কথা জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি। বিশাল কমিটি ও সংগঠনের স্থবিরতা প্রসঙ্গে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘মাঠের বাস্তবতার কারণেই কমিটির আকার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যেখানে ঢাকা মহানগর একটি ছিল সেখানে এখন চার ভাগে কমিটি দেওয়া হয়েছে। ’ স্থবির সংগঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্রদল সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামেও এখনো ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।’-বিডি প্রতিদিন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন