ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পেলে যা করতে চান পদপ্রত্যাশীরা

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। দুদিনের এ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে সংগঠনটির আগামী দিনের কাণ্ডারি। যারা আগামী দুই বছর ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেবে।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ, চেষ্টা- তদবির করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। এখন দেখার পালা কার পালে হাওয়া লাগে।

শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেন কোন নেতা? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ১২ মে পর্যন্ত। ১২ মে ঘোষণা হবে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব।

আগামী দিনে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে আসলে কেমন পদক্ষেপ নিবে এমন বিষয়ে কথা হয় পদপ্রত্যশী একাধিক নেতার সঙ্গে। তাঁরা জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফের বিজয়ী করতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করবেন তাঁরা।

ছাত্রলীগের আগামী দিনে নেতৃত্বে এলে সংগঠনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিবেন জানতে চাইলে বর্তমান কমিটির উপগ্রন্থণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাগর হোসেন সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করবো। যাতে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।

সাগর হোসেন সোহাগ আরও বলেন, আজকে দেশে গুজব-অপপ্রচারের উপর ভিত্তি করে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদেরও অবমাননা করা হয়েছে।

সোহাগ বলেন, নেতৃত্বে গেলে আমি সব গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার করতে একটি অনলাইন একটিভিস্ট সেল গঠন করব। যাদের কাজ হবে ঐকবদ্ধভাবে গুজব, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কাজ করে প্রকৃত সত্য উপস্থাপন করা। যাতে করে মানুষ বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পায়। গুজব-অপপ্রচারের ওপর ভিত্তি করে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে আমরা এর প্রমাণ পাই সাঈদীর চাঁদে অবস্থানের ঘটনা থেকে। তাই আমার প্রথম কাজ হবে, দেশে চলমান গুজবের প্রতিরোধ করা।

সোহাগ আরও বলেন, এ ছাড়া আমার অন্যতম আরেকটি কাজ হবে নবীনদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানসমূহ জাতির সামনে তুলে ধরে তাঁর হাতকে আরও শক্তিশালী করা ভিশন-২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। যাতে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবির) ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহারিয়ার কবির বিদ্যুৎ বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তাঁর হাতে গড়া সংগঠন। আমি নেতৃত্বে এলে ছাত্রলীগকে আরো গতিশীল করে সবার মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে কাজ করব।

শাহারিয়ার কবির বিদ্যুৎ বলেন, আমাদের নতুন নেতৃত্বের সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেটি হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নির্বাচনে যেন আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে ক্ষমতায় আনা যায় আমি সেটি নিয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশ মত কাজ করব।

ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী আরেক নেতা ঢাবির সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু বলেন, ছাত্রলীগকে নিয়ে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। সেগুলো হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পৌঁছে দেওয়া। যাতে আগামী প্রজন্ম সঠিকভাবে জাতির পিতা সম্পর্কে জানতে পারে।

হায়দার মোহাম্মদ জিতু আরও বলেন, ছাত্রলীগ যেহেতু একটি ছাত্র সংগঠন তাই আমি নেতৃত্বে আসলে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করব। এ ছাড়া আমার প্রধান কাজ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তাঁর নেওয়া উদ্যোগগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা ও সেগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করা। যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের আইন সম্পাদক ও পদ প্রত্যাশী আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী আমার হাতে দিলে আমি তাঁর নেওয়া রূপকল্প ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করব। এ ছাড়া সবার মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য তুলে ধরব। যাতে আগামী প্রজন্ম কোনো মিথ্য তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়।

আল নাহিয়ান আরও বলেন, এ ছাড়া আমার আরেকটি বড় কাজ থাকবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক কাজ করে যাওয়া। আর সে লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেওয়া প্রতিটি পদক্ষের বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাব। যাতে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আবারও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে পারেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক রাশিদ শাহারিয়ার উদয় বলেন, এখন যারাই নেতৃত্বে আসবে তাঁদের প্রধান কাজ হলো আগামী নির্বাচনে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বিজয়ী করা। আমি নেতৃত্বে আসলে আবারও শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে তাঁকে আবারও বাংলাদেশের রাষ্ট্রর ক্ষমতায় আনতে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করব।

রাশিদ শাহারিয়ার উদয় আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এই ধারা অব্যহত রাখতে আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমার প্রথম কাজ হবে আগামী নির্বাচনে যেন জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে সেজন্য কাজ করব। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরব।

আরেক সহ-সম্পাদক খাদেমুল বাশার জয় বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। তাই আমি আগামী দিনে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে যাতে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা যায় সেজন্য কাজ করব। মূলত ছাত্রলীগ হবে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড (অগ্রদূত)।

খাদেমুল বাশার জয় আরও বলেন, ছাত্রলীগ যেহেতু ছাত্রদের সংগঠন তাই ছাত্র সমাজের অধিকার রক্ষায় সব সময় সজাগ থাকব। কারণ দেশের প্রতিটি ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত।