ছাত্র ও শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন দিলো বিএনপি
সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যাপারে ছাত্র-তরুণদের দাবি অবশ্যই ন্যায্য এবং যৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি। একই সঙ্গে কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে দলটি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি এবং অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।
গত বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক রয়েছে। তার পর এ বিষয়ে জানানো হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দেশের সব কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বজনিন পেনশন স্কিম চালু করার জন্য দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করে সরকারি পরিপত্র জারি করেছে। এ বিষয়টি নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্প্রদায় ও কর্মচারীদের এই স্মারক প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর প্রতিবাদ করেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান, পরীক্ষাগ্রহণসহ সব প্রকার কার্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রকৃতপক্ষে এটি এই দেউলিয়া সরকারের দুর্নীতির আরেকটি পথ খুলে দেওয়া। যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন সেহেতু অন্যান্য খাতসহ শিক্ষকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে এই পেনশনের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতাকে পুঁজি করে শাসক গোষ্ঠীর আশীর্বাদ পুষ্ট একশ্রেণির ব্যবসায়িক লুটেরা সিন্ডিকেট ও কিছু কিছু সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সীমাহীন লুটপাট করছে। ব্যাংক ও সফল আর্থিক খাত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে তারা বিদেশে অর্থপাচার করছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছে না। সে রকম পরিস্থিতিতে নাগরিকরা সারাজীবনের অর্জিত সম্পদ কোনো ভরসায় এই নতুন লুটপাট স্কিমে বিনিয়োগ করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য, ব্যাংকিং খাত প্রায় দেউলিয়া, এ রকম লুটেরাতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য পেনশন স্কিমের মতো আরও স্কিম চালু করে জনগণের পকেট শূন্য করতে চায় এই লুটেরা সরকার। সরকার তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা চাপাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের বুলি যদি এতই শক্তিশালী হয়ে থাকে, তা হলে পেনশন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। অতএব জনগণ সরকারের হীনরাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অনৈতিক তথাকথিত পেনশন স্কিমসহ সব প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসসমূহ—এমনকি তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের সহিত দাফন সম্পূর্ণ করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের অর্থাৎ স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার ছিল সাম্য— মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা।
সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান। কিন্তু সংবিধানের ২৮ (৪) এবং ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী ও নাগরিকদের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এর বাইরে ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসাবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ,তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কোনো শ্রেণিতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না এবং মেধাভিত্তিক বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মাণের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কতৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিসমূহ দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই তারা ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্রসমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিসমূহের সঙ্গে আমরা একমত।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইন ও বিচার বিভাগের দোহাই দিয়ে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক দাবিসমূহকে দমানোর সব অপচেষ্টাই ব্যর্থ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলন কখনই দমানো যায় না। আমরা আশা করি সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিসমূহ মেনে নেবে। ছাত্রদের ন্যায়সংগত যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে এ সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী ও ইরানের প্রেসিডেন্টকে বিএনপির অভিনন্দন
যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ে লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত মাসুদ পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছে দলটি।
শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাজ্য ও ইরানের দুই নেতাকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে লেবারপার্টি। তার প্রধান স্যার কিয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে টুইটারের মাধ্যমে তাকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরাও আমাদের দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করব যুক্তরাজ্যের যে ঐতিহ্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা এবং তাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের যে সমস্ত দেশে গণতন্ত্রের সংকট রয়েছে, তাদের যে প্রভাব তা বিস্তার করার চেষ্টা করবেন। এটাও আশা করব তার নেতৃত্বে বৃটেনে যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সঙ্কট রয়েছে সেখানে কিয়ার স্টারমার নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
অন্যদিকে ইরানেও নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। তাকেও আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করব, ইরান তার নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন