ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলায় সেই ঊর্মির বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে আলোচনায় আসা সদ্য বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বিরুদ্ধে মামলার আবেদন হয়েছে আদালতে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকার সিএমএম আদালতে গণঅধিকার পরিষদের প্রচার সম্পাদক আবু হানিফ এই মামলাটি দায়ের করেন। পরে আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে পরে আদেশের জন্য রাখেন।
এর আগে গত রোববার (৬ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়া লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
পরে সোমবার (৭ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পোস্ট দিয়েছি এটাই তো যথেষ্ট। অনলি মি করেছি, বিভিন্ন কারণে হতে পারে।’ পরে তিনি বলেন, এ বিষয় আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
তাপসী তাবাসসুম উর্মির ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। এছাড়া, আওয়ামী লীগের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বেশকিছু পোস্টও করেছেন। একটি স্ট্যাটাসে তিনি ছাত্র আন্দোলনের নিহত শহীদ আবু সাইদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন।
এবার মুখ খুললেন বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির মা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে ‘কটূক্তি’ করে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের বিতর্কিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি। তবে তিনি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এটা তার ঠিক হয়নি। এটা একটা বড় অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন ঊর্মির মা নাসরিন জাহান। সোমবার রাতে তার মা নাসরিন জাহান এক সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।
ঊর্মি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তিনি মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ঊর্মি শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে ২০২২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে আলোচনায় এসেছেন। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে। শুধু তাই নয়, এ ইস্যুটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসাবে বদলির পর সাময়িক বরখাস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করিনি, যুদ্ধ দেখিনি। যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটা ইতিহাস। তবে ইতিহাসকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা আমাদের মা-বাবাকে অস্বীকার করতে পারব কি?’
তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্মি ছাত্রজীবনে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। তখন তার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে মাস্টার্স করেছে। আমার সন্তানরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। আমরা খুব সাধারণ জীবনযাপন করি।’
ঊর্মির মা নাসরিন জাহান বর্তমানে মুক্তাগাছার হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তারা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে কাশর জেল রোড এলাকায় নিজ বাসায় বসবাস করেন।
শনিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি। সেখানে লিখেছেন, সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়। এরপর থেকেই সমালোচনায় মুখে পড়েন ঊর্মি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে রোববার ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। পরে সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ঊর্মি সাংবাদিকদের বলেন, আমি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি এটাই তো যথেষ্ট। অনলি মি করেছি, বদলি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর জন্য যদি আমার চাকরি চলে যায়, সমস্যা নেই। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, এটা মীমাংসিত সত্য। রিসেট বাটন মুছে ফেলে অতীত মুছে ফেলা, এর মানে কি? তাহলে তো আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি আমাদের দেশে সরকার হিসাবে আছে। আমার মনে হয়েছে, আমার দায়িত্বশীল জায়গা এটাই। বলা হচ্ছে জুলাই গণহত্যা, এগুলো সবই তদন্ত সাপেক্ষে, মীমাংসিত সত্য না। এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি তো।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, এই ঘটনায় তাকে প্রথমে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। পরে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন