ছাত্র নয়, ফাঁকিবাজির ‘রেকর্ড’ গড়লেন শিক্ষকরা!
শিক্ষকদের কাজ পাঠদান, নিয়মিত স্কুলে আসা হলেও তা ঠিকটাক মতো মানেন কয়জন। তাই বলে স্কুলে না এসে একমাসের অগ্রিম স্বাক্ষর দেওয়ার নজির বোধহয় এ প্রথম সৃষ্টি হল।
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার গিরিধারীপুর হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলে কোনও শিক্ষক উপস্থিত নেই, কিন্তু স্কুলের হাজিরা খাতায় শিক্ষকদের সই করা রয়েছে। কারও নভেম্বর মাস, তো কারও আবার ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ, যে মাস এখনও আসেনি, সেই মাসেও হাজিরা খাতায় ইতিমধ্যেই সই পড়ে গিয়েছে শিক্ষকদের।
এখানেই শেষ নয়। স্কুলে শিক্ষক না আসায়, ক্লাস নিচ্ছেন একজন প্রাক্তন ছাত্রী ও দরজি। ওই দরজি শিক্ষাগত যোগ্যতা হল, তিনি মাধ্যমিক পাশ। শুধু ক্লাস নয়, ষষ্ঠ এবং নবম শ্রেণির পরীক্ষা নিচ্ছেনও এই দু’জন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় স্থানীয় সেনপুর গ্রামে। ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষা চলাকালীন স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে দেন।
গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভের খবর পেয়ে বেলা ১টা নাগাদ স্কুলে পৌঁছান নাকাশিপাড়া ব্লকের স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা ভবেশ চন্দ্র মন্ডল।
অভিভাবকরা অভিযোগ করেন যে, পরীক্ষা শুরু হলেও স্কুলে এসে পৌঁছাননি কোনও শিক্ষক ও শিক্ষিকা। আর সেই পরীক্ষা চলছে দুই বহিরাগতের তত্বাবধানে।
পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে চমকে যান ভবেশ চন্দ্র মন্ডল। স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অবিভাবকদের অভিযোগ, ২০১০ সালে জুনিয়র হাই স্কুল হিসেবে এই স্কুল শুরু হলেও, বর্তমানে তা হাই স্কুলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৬০০।
অভিযোগ, স্কুল শুরুর সময়ে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও, গত চার-পাঁচ বছর যাবৎ স্কুলে শিক্ষকরা প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। এমনকী ক্লাসও হয় না। অধিকাংশ দিনই মিডডে মিলের পরে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেছেন, পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। তবে দরজির দোকানের মালিক সফিকুল স্বীকার করেছেন, গত তিন বছর ধরে তিনি এই স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।
গত দু’মাস ধরে স্কুলের শিক্ষিকারা তাঁকে ১৫০০ টাকা দেন। অভিভাবকদের দাবি, যতক্ষণ না স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ সমস্যা মিটছে, ততক্ষণ বন্ধ থাকুক স্কুল। মঙ্গলবার স্কুলের সমস্ত খাতা ও কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছেন ভবেশ চন্দ্র মণ্ডল। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার স্কুলের পরীক্ষা বাতিল করে আপাতত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, এরপরদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তুতিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
সূত্র: এবেলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন