ছিলেন পল্লী চিকিৎসক, হয়ে গেলেন এমবিবিএস ডাক্তার!
মাসখানেক আগেও প্রেসক্রিপশনে নিজের পদবি লিখতেন পল্লী চিকিৎসক। হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন ধরে পল্লী চিকিৎসকের বদলে লিখছেন এমবিবিএস। আকস্মিকভাবে ‘ডিগ্রি পাওয়া’ এই চিকিৎসক হলেন মৌলভীবাজারের শাখাওয়াত হোসেন আক্কাস।
মৌলভীবাজারের জুড়ী-ফুলতলা সড়কের কামিনীগঞ্জ বাজারে নিজস্ব চেম্বারে বসে এভাবেই রাতারাতি এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়ে গেছেন পল্লী চিকিৎসক আক্কাস। আর ‘ভুয়া’ ডিগ্রি নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
জানা গেছে, নিজ চেম্বারে বসে নামের বাম পাশে ডা. উপাধি লিখে রোগী দেখেন শাখাওয়াত হোসেন আক্কাস। ২৬ নভেম্বর পরেশ কর নামে এক রোগীকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রেমক্রিপশনের ডিগ্রি জায়গায় আক্কাস ডি. ফার্ম (ঢাকা) ও ভি.এইচ.এফ.এ (চট্টগ্রাম) ডিগ্রির নাম লিখেছেন। যা একজন পল্লী চিকিৎকের ডিগ্রি।
আর ৯ ফেব্রুয়ারি সালাউদ্দিন নামে এক রোগীকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আক্কাস প্রেসক্রিপশনে নামের নিচে এমবিবিএস (এ.এম) ডিগ্রির কথা উল্লেখ করেছেন।
জুড়ী উপজেলার বড় ধামাই এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নোমান আহমদ জানান, ১২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি জুড়ী শহরে যান।
ফুলতলা রোডে এমবিবিএস লেখা সাইনবোর্ড দেখে ডা. আক্কাসের কাছে যান তিনি। পরে তাকে দেখিয়ে ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরে ফেরেন। ওই চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খেয়ে পাঁচদিনে তার অসুখ কমেনি বরং বাড়তে শুরু করে। এরপর ডা. আক্কাসের ব্যাপারে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস লেখা ডিগ্রি ও রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে বিএমডিসি’র ওয়েব সাইটে আক্কাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৯১৮৫ সার্চ দিয়ে দেখেন সেখানে মো. মনসুর রহমান নামে এক ডাক্তারের নাম রয়েছে। তখনই তিনি নিশ্চিত হন আক্কাস ভুয়া এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
এ ঘটনার পর তিনি ৩০ এপ্রিল ডা. আক্কাসের বিরুদ্ধে জুড়ী ইউএনও’র বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে আক্কাস বলেন, ‘কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস (অলটারনেটিভ মেডেসিন) ডিগ্রি নিয়েছি। নামের আগে ডাক্তার ও পরে এমবিবিএস লেখার সরকারি অনুমোদন আছে।’
সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া নামের পাশে কারও ডাক্তার লেখার নিয়ম নেই।
অলটারনেটিভ মেডিসিনের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এমবিবিএস ডিগ্রি লেখার প্রশ্নই আসে না। ব্যবস্থাপত্রে এসব ভুয়া ডিগ্রি উল্লেখ করে কিছু পল্লী চিকিৎসক সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’
জুড়ী উপজেলার (ইউএনও) বর্ণালী পাল বলেন, ‘বদলি সংক্রান্ত ব্যস্ততায় এখনও অভিযোগটি তদন্ত করতে পারিনি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন