ছয় সিটি নির্বাচন : জিততে মরিয়া আ.লীগ

আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এটাকে জাতীয় নির্বাচনের মহড়া মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। এ জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে দফায় দফায় জরিপ চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে সদস্য সংগ্রহ অভিযান, কর্মিসভাসহ নানা নামে কর্মসূচি পালন করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।খবর প্রথম আলো’র

বুধবার রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এতে সিটি নির্বাচনের বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। ৮ নভেম্বর অনুরূপ অনুষ্ঠান হবে রংপুরে। পর্যায়ক্রমে অন্য সিটিতেও একাধিক কর্মসূচি পালন করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হতে পারে। ছয়টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে একমাত্র রংপুরের বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের। বাকি পাঁচ সিটি করপোরেশনের মে
য়র বিএনপির। তবে তাঁরা পাঁচ বছর মামলা ও বহিষ্কারের কারণে কারাগার আর আদালতে ঘোরাঘুরি করেই বেশির ভাগ সময় পার করেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো বৈঠক করেননি। রংপুরের তফসিল ঘোষণার পরই বৈঠক ডাকা হবে। তখন বাকি পাঁচ সিটির প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা হবে। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এরই মধ্যে একাধিক জরিপ চালিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে ছয় সিটির জন্যই সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটা প্যানেল তৈরি করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে জরিপে কে এগিয়ে আছেন, দলের সব স্তরে গ্রহণযোগ্যতা কার বেশি, প্রার্থীর ব্যক্তিগত দুর্নাম আছে কি না, প্রতিপক্ষ প্রার্থী কে হচ্ছেন। এসব সিটি করপোরেশনে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রার্থী বাছাই কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এখন স্থানীয় নির্বাচনকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এগুলোতে দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। যত বেশি জয়, তত বেশি কর্মীরা উজ্জীবিত হবেন।

জানা যায়, রংপুরে প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। কারণ, সেখানে ইতিমধ্যে ১১ জন প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখানে বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরফুদ্দিন আহমেদ।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভূমিকা, প্রতিপক্ষের শক্তি ও কৌশল, মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের ভূমিকা বা দক্ষতা এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। সে অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কৌশল ঠিক করা হবে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের জুন-জুলাইয়ে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়। পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন।

প্রার্থী কারা

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এক বৈঠক শেষে সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এবং রাজশাহীতে খায়রুজ্জামানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহী উদ্দিন সেলিমও প্রার্থী হতে চান। তাঁদের নামে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ও বিলবোর্ড দেখা যায়। তাঁদের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েও ব্যানার-পোস্টার টানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বদরউদ্দিন আহমদ বলেন, গত নির্বাচনের পর থেকেই তিনি কাজ করছেন। দলীয় প্রধানও সবুজসংকেত দিয়েছেন। এর বাইরে আর কেউ আগ্রহী থাকলে সেটা কেন্দ্র সমাধান করবে।

রাজশাহীতে খায়রুজ্জামানের বাইরে প্রকাশ্যে আর প্রার্থী নেই। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ঘনিষ্ঠ মহলে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে দল খায়রুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা করলে তিনি তা মেনে নেবেন বলে নেতাদের জানিয়েছেন।

বরিশাল ও খুলনায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মনোনয়ন দেওয়ার আলোচনা আছে। এ ক্ষেত্রে বরিশালের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভাই খোকন সেরনিয়াবাত ও ছেলে সাদেক আবদুল্লাহর নাম কেন্দ্রীয়ভাবে শোনা যাচ্ছে। খুলনায় সাংসদ শেখ হেলালের ভাই শেখ জুয়েলের নাম আলোচনায় আছে।

এ ছাড়া খুলনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আনিসুর রহমানের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা শোনা যায়। গত নির্বাচনে খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি এখন মোংলা-রামপাল আসনের সাংসদ। মেয়র নির্বাচনে তাঁর আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।

গাজীপুরে মূল প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৩ সালে আজমত উল্লাহ বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে ছিলেন। দল আজমত উল্লাহকে সমর্থন দিয়ে জাহাঙ্গীরকে অনেকটা জোর করেই বসিয়ে দেয়। এবার জাহাঙ্গীর আলম কেন্দ্রের সুবিবেচনায় আছেন বলে আলোচনা আছে।