জরাজীর্ণ ও লোকবল সংকটে চলছে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এবং যমুনা নদী বিধৌত চরাঞ্চল বেষ্টিত এলাকায় প্রায় চার লক্ষ মানুষের বসবাস। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির। আর্থিক সংকটের দরুন এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা পেতে দ্বারস্থ হতে হয় একমাত্র বেলকুচি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে এসে তারা সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে বিপাকে পরছেন এবং সেই সাথে অপচয় হয় অর্থ।

সরকার গ্রামাঞ্চলের মানুষকে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলা কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু অন্ত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বেশ কয়েকটি পদ থাকলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই একজনও। মহিলা রোগীদের জন্য নেই কোন গাইনি ডাক্তার সেই সাথে নেই কোন সার্জন। ফলে বাধ্য হয়ে উপজেলার জনসাধারণের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে ধর্ণা দিতে হয় সিরাজগঞ্জ সদর অথবা বগুড়া শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বেসরকারী ক্লিনিকে। এমনকি হাসপাতালে রোগীর জরুরি এক্স-রে করার প্রয়োজন হলেও মেশিন অকেজো রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ হয়েছে তবে অপারেটর নেই। ফলে রোগীর জরুরি পরীক্ষার প্রয়োজন হলে বাহিরে থেকেই পরীক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগীদের সেবায় দুইটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও একটি সম্পুর্ন বিকল এবং অপরটি কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। ফলে সংকটাপন্ন কোন রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া দুষ্কর হয়ে পরেছে।

আর সেই সুযোগে হাসপাতালে থাকা দালাল চক্র এই সব অসহায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীদের ভাল সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আশপাশে গড়ে উঠা অনুমোদনহীন বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন বিহীন অদক্ষ টেকনিশিয়ানদের দিয়ে করা হচ্ছে এসব জরুরী পরীক্ষা নিরীক্ষা। এতে করে রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারছেনা ডাক্তার। ফলে রোগীও পাচ্ছেন না সঠিক চিকিৎসা সেবা। একদিকে উপজেলার জনসাধারণ উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে আর্থিকভাবেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিবর্গ বলছেন, বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার হলেও লোকবল ও স্বাস্থ্য বিভাগে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই এ দুর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়ার জন্য জোর আহ্বানও জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এ.কে.এম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, যদিও এটি ৫০ শয্যার হাসপাতাল তবে ৩১ শয্যার চিকিৎসা ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এখানে অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কিন্তু প্রয়োজনীয় অপারেশনের যন্ত্রপাতি সংকটে বন্ধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই এবং লোকবলেরও সংকট রয়েছে। তবে আমরা ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের নিকট জনবল ও সরঞ্জামের চাহিদা দিয়েছি।