জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের চাহিদার স্বীকৃতি দাবি প্রধানমন্ত্রীর
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে একটি বাস্তবসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বৈশ্বিক এবং আন্তঃসীমান্ত সমস্যা। কোনো দেশই এর ভয়াল পরিণাম থেকে সুরক্ষিত নয়।
এসময় ধনী দেশগুলোর কাছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অর্থায়ন চাহিদার স্বীকৃতি দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিশেষ করে দরিদ্রতম ৪৮টি দেশ সবচেয়ে বেশি পর্যদস্তু অথচ বিশ্বে কার্বন নিঃসরণে তাদের অবদান মাত্র শতকরা ৫ ভাগ। তাদের অর্থায়ন চাহিদার স্বীকৃতি দাবি করেছেন তিনি। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘জলবায়ুু পরিবর্তন এখন একটি বৈশ্বিক এবং আন্তঃসীমান্ত সমস্যা এবং এর মারাত্মক পরিণতি থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়।’ কোপ২৬ সম্মেলনে কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে ‘সিভিএফ-কমনওয়েলথ হাই-লেভেল ডিসকাসন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং এর নাজুক দেশগুলোকে অপূরণীয় ক্ষতির অগ্রভাগে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে। এ প্রসঙ্গে, তিনি সাম্প্রতিক আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) রিপোর্টের উল্লেখ করেন যা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, এই গ্রহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে সকলকে জরুরি এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যৌথ প্রচেষ্টা সিভিএফ এবং কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলো প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।’ সিভিএফ-এর চেয়ার শেখ হাসিনা সিভিএফ এবং কমনওয়েলথের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার জন্য ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রস্তাবের প্রথম দফায় তিনি বলেন, আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই, সবুজ এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান অর্জনে আমাদের মধ্যে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া, গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয় দফায় তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন অবস্থান প্যারিস চুক্তিতে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সুরক্ষিত করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। জলবায়ুু অর্থায়ন হতে হবে বিদ্যমান এবং ভবিষ্যত ওডিএ’র অতিরিক্ত। এই পরিমাণটি অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ অনুপাতের সাথে বরাদ্দ করা উচিত।’
তৃতীয়ত, তিনি বলেন, জলবায়ু অভিবাসীদের সমস্যা-জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে মানুষ তাদের পৈতৃক ভিটা এবং ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে চ্যুত হয়েছে, যা আলোচনা করা দরকার এবং এইসব মানুষের পুনর্বাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব নিতে হবে।
চতুর্থ দফায়, তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে রাখতে তাদের উচ্চাভিলাষী এবং আগ্রাসী এনডিসি ঘোষণা করতে প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলোর ওপর চাপ হিসাবে কাজ করতে পারে।’
এছাড়াও, জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা মেটানোসহ সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নয়নশীল দেশগুলেতে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তি হন্তান্তর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি পঞ্চম দফায় বলেন, একই সাথে, সিভিএফ এবং কমনওয়েলথ সদস্যদের উন্নয়ন চাহিদা বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি একসাথে আমাদেরকে অবশ্যই জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাস্তবসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সমাধানগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে।
ষষ্ঠ দফায় বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী, সাহসী এবং দায়িত্বশীল পদক্ষেপের জন্য কার্যকর সহযোগিতা এবং সহযোগিতার তাৎপর্য প্রমাণ করেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হন্তান্তরের জন্য আমাদের দুর্বলতা এবং প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন