জাতিসংঘে ইউক্রেন ইস্যুতে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছরের মাথায় জাতিসংঘে বিশেষ বৈঠক। শান্তি প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি। ভোট দেয়নি ভারত। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বিশেষ বৈঠক বসেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ সভার আয়োজন।
দুই দিন সভা চলার পর মার্কিন সময়ে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশেষ ভোটাভুটি হয় সাধারণ সভায়। বহু আলোচনার পর জার্মানি প্রস্তাবটি পেশ করে। যেখানে বলা হয়, জাতিসংঘের চার্টার মেনে ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। ১৪১ টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
সাতটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ ৩২টি দেশ ভোটে অংশ নেয়নি। গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে প্রথম আক্রমণ চালিয়েছিল রাশিয়া। তার ঠিক এক বছর পর জাতিসংঘে এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হলো।
এর আগেও একাধিকবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভোটাভুটি হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবারেই যে ফলাফল পাওয়া যায়, এবারও প্রায় তেমনই ফলাফল মিলেছে। ইউরোপ এবং আমেরিকার অধিকাংশ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
প্রস্তাবের বিপক্ষে থেকেছে রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, মালি, এরিত্রিয়া ও নিকারাগুয়া। যে ৩২টি দেশ ভোটে অংশ নেয়নি, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারত, পাকিস্তান, চীন, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ।
মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু দেশও ভোটে অংশ নেয়নি। ঠিক এক বছর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। তারপর থেকে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় শান্তি প্রস্তাব নিয়ে একাধিক ভোট হয়েছে। একবার ছাড়া প্রতিটি ভোটেই বিরত থেকেছে ভারত।
বস্তুত, এবার যাতে ভারত ভোট দেয়, তার জন্য বিভিন্ন মহলে কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছে। ভারতে এসেছেন মার্কিন কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদেরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ভারত সফর করেছেন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক কিছুদিন আগেই ভারত সফর করে গেছেন।
এদিন ভোটাভুটির আগে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি ইনেস পোলকে তিনি জানিয়েছিলেন, ভারত যাতে ভোট দেয়, তার জন্য সবরকম চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত তার আগের অবস্থানেই অনড় থাকল। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত আগেই তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
তাদের বক্তব্য, কোনো যুদ্ধই কাম্য নয়। সমাধানের রাস্তা খোলা দরকার। কিন্তু এই লড়াইয়ে তারা কোনো পক্ষ অবলম্বন করতে চায় না। বস্তুত, যুদ্ধ চলাকালীন ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনেছে।
এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সমালোচনা করলে ভারত জানিয়েছে, ইউরোপ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর যে পরিমাণ তেল সেখান থেকে নিচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম ভারত কিনছে। কূটনীতিকদের চোখে এদিনের ভোট গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো প্রায় সকলেই ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে।
ভারত, পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা কোনো দেশই ভোট দেয়নি। এদিকে, চলতি সপ্তাহেই ভারত সফরে আসার কথা জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎসের। তার সফরে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী কথা হয়, সেদিকেই তাকিয়ে কূটনীতিকেরা।
অন্যদিকে, ভারতের এবারের অবস্থানের পর পশ্চিমা দেশগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তাও গুরুত্বপূর্ণ। এদিন জাতিসংঘের ভোট নিয়ে কূটনীতিকদের বক্তব্য, যা আশা করা গেছিল, তাই ঘটেছে। বিরাট কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাউথ সুদানের মতো কিছু দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু বড় কোনো দেশ সেই অর্থে অবস্থান পরিবর্তন করেনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন