জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতা দেখছে না ইসি
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে ১৭টি রিট পিটিশন (মামলা) চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও বাকি সাতটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত। ১৭টি মামলার মধ্যে ১৩টিতেই রুল ইস্যু করেছেন আদালত। তিনটিতে রায়ের বিরুদ্ধে ইসি আপিল করেছে। এসব মামলা চলমান থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে- এমন কোনো আইনি জটিলতা দেখছে না ইসি সচিবালয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এসব তথ্য জানিয়েছে ইসির আইন শাখা। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আইনগত কোনো জটিলতার শঙ্কা না থাকায় নির্বিঘ্নে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হচ্ছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা ও ২০ ডিসেম্বর বা তার পরে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতা হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে বলেও জানান তিনি। ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. সেলিম মিয়া জানান, আমরা কমিশন সভায় জানিয়েছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো আইনি জটিলতা আমরা এখনও দেখছি না। একই সঙ্গে চলমান রিটের অবস্থানও জানিয়েছি। তিনি বলেন, যদি কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়, তখন সেগুলো মোকাবেলা করব।
জানা গেছে, কমিশন সভায় ইসির আইন শাখার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ‘এখন পর্যন্ত কোনো রিটে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত থাকার মতো কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ নেই। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে- এমন কোনো রিট নেই।’
এছাড়া নির্বাচনের বিধি প্রতিপালন বিষয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরে ওই সভায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে আচরণ বিধিমালা ও পরিচালনা বিধিমালাসহ অন্যান্য বিষয় প্রতিপালন দেখভালে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে চারজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রয়োজন হবে। এতে ৩০০ আসনে মোট ১ হাজার ২০০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসব ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশিক্ষণের বিষয়ে জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে। ইসির প্রস্তাব পেলে ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেবে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট। এছাড়া ৬৪ জেলায় ইলেক্টোরিয়াল ইনকোয়ারি কমিটি গঠনের জন্য একজন করে যুগ্ম জেলা জজ ও একজন করে সিনিয়র সহকারী বা সহকারী জজ নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল দেশের ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ওই ঘটনায় ১২টি আসন নিয়ে ১০টি রিট আবেদন দায়ের করা হয়। সব মামলায় রুল ইস্যু করেছেন আদালত। সব রিটই চলমান রয়েছে। তবে কোনো স্থগিতাদেশ নেই। নোয়াখালী-৫ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে রিট করেছেন মওদুদ আহমদ।
এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে বিবাদী করা হয়েছে। রিট পিটিশন নম্বর-৮৫৫৮/২০১৮। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সীমানা নিয়ে মামলা করেছেন মো. সুমন সরকার। রিট পিটিশন নম্বর-৭১৭৬/২০১৮। আর কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সীমানা নিয়ে মামলা (নম্বর ৮০৯৪/২০১৮) করেছেন মো. আ. হাই সরকার। এছাড়া কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসন নিয়ে মো. শফিকুল আলম এবং সাতক্ষীরা-৩ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা নিয়ে মো. ওয়াহিদুজ্জামান মামলা করেছেন।
এ পাঁচটি রিট আবেদনে ইসির পক্ষে লড়ছেন ব্যারিস্টার ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন খান। সব মামলায় রুল ইস্যু হয়েছে। অপরদিকে লক্ষ্মীপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সীমানা নিয়ে দুটি রিট পিটিশন চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮১২ নম্বর রিট পিটিশনটি দায়ের করেছেন মো. সালাহ উদ্দিন এবং ৮৭০৩ নম্বর রিট পিটিশনটি দায়ের করেছেন এবিএম জিল্লুর রহমান। এ দুটি রিট আবেদনে ইসির পক্ষে লড়ছেন আইনজীবী মো. তৌহিদুল ইসলাম।
সীমানা নিয়ে ১২টি ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে ৫টি মামলা চলমান * বিধি প্রতিপালনে প্রতি আসনে ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পরিকল্পনা
এ দুটি মামলার রুল ইস্যু করেছেন আদালত। তবে স্থগিতাদেশ নেই। এছাড়া সিলেট-২ ও সিলেট-৩ আসনের সীমানা নিয়ে মো. আনহার মিয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সীমানা নিয়ে দুলাল চৌধুরী রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, এসব মামলার রুলের জবাব দেয়ার ক্ষমতা দিয়ে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলার যে অগ্রগতি ও নির্দেশনা রয়েছে তাতে নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে সাত মামলা : রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে ইসির বিরুদ্ধে সাতটি মামলা চলমান। এর মধ্যে তিনটিই দায়ের করেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্তজা। এর মধ্যে রিট পিটিশন নম্বর ১১৬০২/২০১৩ ও ৯৯৪/২০১৮-এর রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বাকি চারটি মামলার মধ্যে তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধনের দাবি জানিয়ে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দুটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
সেগুলোর নম্বর হচ্ছে ১২৪৭০/২০১৭ ও ১০৯৪৯/২০১৮। এর মধ্যে একটি মামলায় রুল ইস্যু করেছেন আদালত। এ মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে ইসি। আর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের নিবন্ধন না পেয়ে মামলা করেছেন ববি হাজ্জাজ।
রোববার এ দলটিকে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই রায়ের পর ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এনডিএমকে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে এনডিএমকে নিবন্ধন না দেয়ার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।
তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য একজন আইনজীবীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ববি হাজ্জাজ বলেন, ইসি আপিল করলে আমরাও নিশ্চয়ই আইনিভাবে লড়ব। আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।
এদিকে ইসি সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন নিয়ে মামলা পরিচালনা ও আইনজীবী নিয়োগ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে আইন শাখায়। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা হাতেনাতে ধরেছেন কমিশনাররা। সাতক্ষীরা-৩ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা নিয়ে দায়ের হওয়া রিট পিটিশন নম্বর ৯৮৫৯ মামলার আইনজীবী নিয়োগ করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ওই আইনজীবী নিয়োগ অনুমোদনে কমিশনারদের স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা এড়িয়ে ইসি সচিবের স্বাক্ষরের পর ফাইলটি সরাসরি সিইসির কাছে তোলা হয়। বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় পুনরায় ওই ফাইল কমিশনের অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। এ ঘটনায় ওই মামলায় আইনজীবী নিয়োগে বেশ কয়েকদিন দেরি হয়ে যায়। আইন শাখায় এমন অনুশীলন চললে যে কোনো মুহূর্তে আইনি জটিলতাও দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা তাদের।-যুগান্তরের সৌজন্যে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন