জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে ২৪০ কোটি টাকার জমি বিক্রি করতে এসে ধরা
ঢাকার তুরাগে ৪ একর ২৪ শতাংশ জায়গা বিক্রি করবেন মালিক সেলিম হাওলাদার। এমন খবরে ওই জমি কিনতে যোগাযোগ শুরু করেন আবদুল মালিক। এই জায়গা কেনাবেচায় মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন পিয়ার হোসেন, নাসির হোসেন, আবদুল মান্নান, রব নিরু ও গোলজার হোসেন। তারা ৫৫ কোটি টাকায় পুরো জমি বিক্রির দফারফা করেন।
বিক্রির ৫ কোটি টাকার টোকেন মানি নিতে গত ৩০ ডিসেম্বর মালিক সেলিম হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর মগবাজারের ভর্তা ভাত হোটেলে বসেন। আগে থেকেই কথা বলা ছিল- সেখানে ক্রেতা আবদুল মালিকের সঙ্গে তাদের প্রাথমিক লেনদেন হবে। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন সেলিম হাওলাদারের ছোট ভাই আলমগীর হাওলাদার।
তিনি অভিযোগ করেন, জায়গা বিক্রি করতে আসা এই ব্যক্তি প্রকৃত মালিক নন।
তার ভাই সেলিম হাওলাদার এই ব্যক্তি নন। এ সময় হোটেলে উপস্থিত সেলিম হাওলাদার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখান এবং নিজেকে প্রকৃত মালিক হিসেবে দাবি করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ডিবি পুলিশের শরণাপন্ন হন ক্রেতা আবদুল মালিক। তারা ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত সেলিম হাওলাদারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা শুরু করেন।
ভুয়া জমির মালিক সাজার অভিযোগে ওইদিনই রমনা থানায় একটি মামলা করেন আলমগীর হাওলাদার। মামলা নম্বর ২৬।
আলমগীর হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, জায়গার প্রকৃত দাম ২৪০ কোটি টাকা। তিনি যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারা কাগজপত্র জাল জালিয়াতি করে তার ভাইয়ের জায়গা বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। প্রকৃত মালিক তার ভাই সেলিম হাওলাদার থাকেন গ্রামের বাড়ি বরিশালে।
তার ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপিও তিনি এ প্রতিবেদককে দেন। ওই কপি নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখায় যোগাযোগ করে দেখা যায়, আলমগীরের দেওয়া সেলিম হাওলাদারের কপির তথ্যের সঙ্গে সরকারি সফটওয়্যারে থাকা তথ্যের মিল রয়েছে।
অর্থাৎ সফটওয়্যারে বরিশালে অবস্থান করা সেলিম হাওলাদারের পিতার নাম দেওয়া আছে আ. রশিদ হাওলাদার, মাতা রাহেলা বেগম, জন্ম তারিখ ১ মার্চ ১৯৬০। এনআইডি নম্বর-৩৭২৫৫৭৯১৭৫। জমির মালিক সেজে আসা সেলিম হাওলাদারেরও তথ্য সরকারি সফটওয়্যারে পাওয়া যায়। পিতা-মাতার নাম এবং ঠিকানারও মিল পাওয়া যায়।
ভিন্নতা পাওয়া যায় এনআইডি নম্বরে এবং জন্ম তারিখে। তার স্মার্ট এনআইডি নম্বর- ৪৬৫৫৪৭০৭৩২। জন্ম তারিখ ১২ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সাল। এই এনআইডি ব্যবহার করা ব্যক্তির আরেকটি এনআইডির তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে তার নাম দেওয়া আছে আ. মোতালেব শিকদার, পিতা- মান্নান শিকদার, মাতা- আয়াতুন্নেছা। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি গ্রামে। জন্ম তারিখ ৮ জুলাই ১৯৬৫ সাল। অর্থাৎ এই ব্যক্তির দুটি এনআইডি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলমগীরের মামলাটি রমনা থানায় দায়েরের পর তা ডিবি মতিঝিল বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম তদন্ত করছে। টিম লিডার সহকারী কমিশনার (এসি) শিকদার হাসান ইমাম গত ১৭ জানুয়ারি এ প্রতিবেদককে জানান, যারা জায়গা বিক্রেতা সেজেছিল তারা মূলত প্রতারক চক্র। মামলার পরই ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা এনআইডি, চেয়ারম্যানের ওয়ারিশ সার্টিফিকেট এবং জমির দলিল জাল করে বিভিন্নজনের জমি বিক্রি করে। এদের কয়েকটি সিন্ডিকেট আছে। এরা ঝামেলাপূর্ণ জায়গাগুলোর মালিক সেজে বিক্রি করে দেয়। পুরো সিন্ডিকেটটিকে খুঁজে বের করার তদন্ত চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে জায়গা বিক্রির জন্য এনআইডি জাল করা হয়েছে সেটি তুরাগ থানার হরিরামপুর রানা ভোলা এলাকায়। জায়গাটির দখলে আছেন আরেক ব্যক্তি। জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলছে। এক ব্যক্তির একাধিক এনআইডির বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশনের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন