জানাজায় জনসমুদ্র, প্রিয় প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় আল্লামা শফী

শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন। আল্লামা আহমদ শফীর জীবনের ৭০ বছরের বেশি কেটেছে দেশের বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায়।
জীবনের নানা উত্থান ও ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ। সেই প্রিয় প্রাঙ্গণই চিরনিদ্রার বিছানা হিসেবে বেছে নেন শীর্ষ এই আলেম।

শনিবার দুপুরে লাখো ভক্ত-অনুসারীর অংশগ্রহণে নামাজে জানাজা শেষে প্রিয় প্রাঙ্গণের ‘মকবরায়ে জামেয়া’ নামক কবরস্থানে শায়িত হন শীর্ষ এই আলেম।

দেশের শীর্ষ এই কওমি আলেমকে শেষ বিদায় জানাতে ভোররাত থেকে ঢল নামে ভক্ত-অনুসারীর। ঢাকা থেকে আল্লামা শফীর লাশ আসার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ।
সকাল ৯টায় আল্লামা শফীকে বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ভক্ত-অনুসারীরা।

কিছুক্ষণ পর ভক্ত-অনুসারীদের শ্রদ্ধা জানাতে লাশ রাখা হয় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে।

দুপুর ১২টার মধ্যে মাদ্রাসা এলাকা ছাড়িয়ে গণজমায়েত ছড়িয়ে পড়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।

এ সময় বিস্তৃত এলাকায় লোকজন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যান চলা বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, জানাজায় ২ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটে।

দুপুর পৌনে ২টায় আল্লামা আহমদ শফীর লাশ নিয়ে আসা হয় হাটহাজারী ডাকবাংলো এলাকায়। সেখানে ২টা ১০ মিনিটে শুরু হয় জানাজা নামাজ।

এতে ইমামতি করেন আল্লামা আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ।

জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক মশিউর রহমান জুয়েল, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

জানাজা শেষে আল্লামা আহমদ শফীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভিতরে ‘মকবরায়ে জামেয়া’ নামক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে আল্লামা আহমদ শফীর জানাজা সামনে রেখে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠে ছিলেন সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, জানাজার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর ছিল প্রশাসন
৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা আহমদ শফী। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্যের অবনতি হলে শুক্রবার বিকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর।