জামায়াতকে সবসময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করতে হয়েছে: ডা. শফিকুর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শুধুমাত্র ভোট বা নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল নয়। দলটি বরং আর্ত-মানবতার মুক্তি ও সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন করে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিবর্তন করতে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত থানা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমনভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে চাই যাতে রাষ্ট্রই সকল মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে। জামায়াত এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এ কাজ করেনি বরং তারা আত্মস্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ, শ্রেণি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ, সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ রক্ষা সহ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করেছে। তাই জামায়াতকে সবসময় স্রোতের বিপরীতে কাজ করতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পথচলা অতীতে নির্বিঘ্ন ছিলো না; এখনো নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তদানীন্তন জালিম সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মামলা, হামলা, গণগ্রেফতার, রিমান্ড, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুপ্তহত্যা ছিলো আমাদের নিত্যসঙ্গী। এমনকি জুডিশিয়াল কিলিং-এর মাধ্যমে আমাদের শীর্ষনেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে।’

জামায়াত প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধের রাজনীতি করে না উল্লেখ করে আমিরে জামায়াত বলেন, ‘আমরা বরং ময়দানে জানমালের কোরবানীর মাধ্যমে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রচলিত সকল প্রকার অনিয়মের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে চাই। আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমরা মজলুম হলেও জালেম হব না।

অনুষ্ঠানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ।

বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন, মু. আতাউর রহমান সরকার, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন ও ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদি প্রমুখ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ বৈঠক অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার বিকালে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত ।

এ সময় সংগঠনের নায়েবে আমিরগণ এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ঐক্য বুকে ধারণ করে মানবিক বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলেন, দেশের প্রতিটি ব্যাপারে আপনাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বাবস্থায় ধৈর্য, সহনশীলতা, মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ও ইনসাফের ওপর দৃঢ় থাকার চেষ্টা করতে হবে। কোনো কথা এবং বক্তব্য-মন্তব্য করার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো উসকানি কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়ানো একেবারেই ঠিক হবে না। সর্বোপরি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের সাথে নিয়ে মানবিক বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করি আপনারা সকলে বিষয়টির দিকে গুরুত্বসহকারে নজর দেবেন।

পরিশেষে তিনি প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে হেফাজত করার জন্য মহান রবের নিকট দোয়া কামনা করে বলেন, সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থেকে বাংলাদেশকে হেফাজত করুন এবং বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল দেশ হিসেবে কবুল করুন।