জামায়াতের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’, ভাঙছে কী ২০ দলীয় জোট
জামায়াতের সঙ্গে নানা পর্যায়ের দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের শঙ্কায় পড়েছেন শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা। তারা বলছেন, অন্তর্দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সরকারের লোভনীয় প্রস্তাব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে জোটের ঐক্যে। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকারের প্ররোচনায় জোট ছাড়লে জাতীয়তাবাদী শক্তি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জামায়াতই।
উল্লেখ্য ধর্মভিত্তিক এই দলটি বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেই সখ্য রেখে এসেছে। তা সে সাতচল্লিশের দেশভাগে ব্রিটিশদের পক্ষেই হোক, আর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেই হোক। এমনকি পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হওয়ার পরও এই দলটি সবসময়ই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেই জোট বেধে নিজের অবস্থান সংহত রেখেছে। তবে বাংলাদেশে পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধু খুনের পর দেশের প্রতিক্রিয়াশীল ধারায় নিষিদ্ধ এই দলটি ক্ষমতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে নিজেদের সংহত করবার সুযোগ আদায় করে নেয়। তবে মাঝে ৮৬ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য করবারও নজির রাখে দলটি। এরপর আবারও তারা বিএনপির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এমনকি বিএনপি সরকারেরর অংশীদারও হয় তারা।
এই ধারাবাহিকতায় এখনো দলটি বিশ দলীয় জোটের ব্যানারে বিএনপির সঙ্গেই রয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধ মামলায় দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি ও দীর্ঘমেয়াদে কারাবাস হওয়ায় তারা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়বার চেষ্টা করছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কথা রয়েছে।
তবে এসব কথাকে যে কথার কথা নয় তার প্রমাণও দিচ্ছে দলটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের অবস্থান অনেকটা তার প্রামাণিক অবস্থান জানান দেয় বৈকি।
এসব প্রমানের একটি হচ্ছে, সিলেট সিটি নির্বাচনে দলটির অবস্থান। সেখানে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপি দলীয় একক প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও জামায়াত আলাদা করে প্রার্থী দেয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে জোটের বৈঠকে দফায় দফায় দেন-দরবার হলেও নির্বাচনে নিজস্ব প্রার্থী রাখার ব্যাপারে অনড় থাকে জামায়াত।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে জামায়াত প্রার্থীর সখ্যতা নিয়ে কানাঘুষা, জামায়াতের আমিরের কারামুক্তি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ, জল্পনা-কল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে, এসব কি তাহলে জামায়াতের জোট ত্যাগের আলামত?
বিভিন্ন সমীকরণ বিবেচনায় জোটের শরীক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহীম এমনই আভাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জামায়াতকে বোঝাতে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। জামায়াত উত্তর দিয়েছে তারা তাদের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করবে। নির্বাচনের আগে বড় দুটি দলের বাইরের দলগুলোর কাছে অনেক লোভনীয় প্রস্তাব আসবে।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ মনে করেন, এই মুহূর্তে জোট ছাড়লে মূল্য দিতে হবে জামায়াতকেই। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তারা মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিল। কিন্তু জোটবদ্ধভাবে তারা ১৭টি আসন পেয়েছিল। তাদের ভাবতে হবে তারা কম আসন চায় নাকি বেশি আসন। জোট ভাঙলেও ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য মুহাম্মদ ইবরাহীমের।
তবে ভোটের রাজনীতির স্বার্থেই ক্ষমতাসীনরা জামায়াতকে জোট থেকে সরাতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন মওদুদ আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকার আগে বলেছে জামায়াতকে ছেড়ে আসলে কোনো সমস্যা নেই। এখন দেখা যাচ্ছে, জামায়াতের লোকজনই আওয়ামী লীগে যোগদান করছে, এতে আবার তাদের কোনো সমস্যা নেই। সরকার সবসময়ই দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে আসছে।
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জোটের ঐক্য টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী মওদুদ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন