জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে বন্যায় মানবেতর অবস্থা
‘সীমান্তের জিরো লাইনে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। অনেক কষ্টের মধ্যে কোনো রকমে বেঁচে আছি। তার উপর গত এক মাসে দু-দুবার ঢলের পানিতে ক্যাম্প তলিয়ে যাওয়ায় মরার উপর খাড়ার ঘা অবস্থা’— কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনের বয়স্ক রোহিঙ্গা নারী আমিরা খাতুন।
তার মতো এই রোহিঙ্গা শিবিরের সবারই একই অবস্থা। এই শিবিরের প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তুমব্রু খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরটি দ্বিতীয় বারের মতো পানিতে তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে খালের পানি বাড়তে থাকায় শিবিরের বেশিরভাগ অংশই এখন নিমজ্জিত। গত মাসের প্রথম দিকেও নিম্নচাপের কারণে প্রবল বর্ষণে এই শিবিরটি পানিতে তলিয়ে যায়। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দুবার পানি উঠায় রোহিঙ্গারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
রোহিঙ্গা নুরুচ্ছফা জানান, গত আগস্টে প্রাণ বাঁচিয়ে অনেক রোহিঙ্গার মতো আমরাও জিরো লাইনের শিবিরে আশ্রয় নেই। কিন্তু এখানেও নানা প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের দিন কাটছে। মিয়ানমার বাহিনীর কারণে নিজ দেশে যেতে পারছি না। আর বিজিবির প্রহরায় জিরো লাইন ছেড়ে বাংলাদেশেও আশ্রয় নেয়া যাচ্ছে না। মধ্য খানেই আমাদের মরতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান কদিন আগে ত্রাণ বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকট ছিল জিরো লাইনের এই রোহিঙ্গা শিবিরে। এছাড়া বার্মার বিজিপির গুলিতে আহত এক শিশু এখন পঙ্গু হওয়ার উপক্রম। সব সময় ভয়ের মধ্যে আতংকের মধ্যে আমাদের দিন কাটে। এর মধ্যে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে বন্যার পানি। ঘর ছেড়ে রোহিঙ্গারা টিলা মাচান ঘরে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এভাবে জীবন চলে না। একই কথা বলছিলেন রোহিঙ্গা আমির হোসেন ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম।
ঘুনধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, মানবিক সহায়তা হিসেবে রোহিঙ্গা শিবিরে কিছু মাচান ঘর বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। এক মাসের ব্যবধানে দুবার পানি উঠায় তারা চরম অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
তিনি জানান, শিবিরে আরো কিছু মাচান ঘর তৈরি করা গেলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় তুমব্রু খালের পানি কমতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা শিবির থেকে পানি নেমে গেলেও কাঁদা পানিতে একাকার অবস্থা। রাতে রোহিঙ্গাদের মাচান ঘর ও টিলায় অবস্থান করতে হবে বলে জানান তারা।
উল্লেখ্য, গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক সহিংসতায় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সে সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। পরে এ শিবির থেকে অনেক রোহিঙ্গা কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা এই শিবিরে অবস্থান করছে। সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতায় তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন