‘জিয়া পরিবারের এখানেই ইতি টানা হলো’

দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন একাধিক সংসদ সদস্য। একজন সাংসদ বলেন, জিয়া পরিবারের এখানেই ইতি টানা হলো। জিয়া পরিবার আর কোনো দিন দাঁড়াতে পারবে না, নির্বাচন করতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার রায়ের পর বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন ছয়জন সাংসদ।

রায় নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারেন না। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসের আশ্রয়কেন্দ্র হয়েছে। কিন্তু অপরাধের রাজনীতি বাংলাদেশে হবে না। অর্থ পাচারের অভিযোগেও খালেদা জিয়াকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম অভিযোগ করেন, বিভিন্নভাবে এই মামলা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল বিএনপি। ৬০ বার উচ্চ আদালতে আবেদন করেছে, ৪০ বার সময় নেওয়া হয়েছে। তিনজন বিচারক পাল্টানো হয়েছে। শেষের দিকে পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে। গতকাল বুধবারও নাটক সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে।

এ রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের প্রধানমন্ত্রীও দুর্নীতি করলে বাঁচতে পারেন না। এটা সবার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।

নজিবুল বশর বলেন, জিয়া পরিবারের এখানেই ইতি টানা হলো। জিয়া পরিবার আর কোনো দিন দাঁড়াতে পারবে না, নির্বাচন করতে পারবে না।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, সমগ্র জাতি প্রত্যাশা করেছিল, এ রকম একটি দুর্নীতিতে সাজা হবে। সে সাজা হয়েছে। তিনি এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কোনো সম্পর্ক নেই। খালেদা জিয়া যে দুর্নীতি করেছেন, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, প্রতীক্ষিত রায় হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত করলে জনগণ খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করবে। তিনি এরশাদের মতো খালেদা জিয়াকে সাজা মেনে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করার আহ্বান জানান।

এ রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে সরকারি দলের ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বলেন, এ রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রায়, এতিমের অধিকার প্রতিষ্ঠার রায়। এ ছাড়া বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ আলোচনায় অংশ নেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের পর খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে আসামিদের বাচ্চাদের জন্য একসময় ব্যবহৃত কিডস ডে কেয়ার সেন্টারের তিনতলা ভবনের নিচতলায় দুটি রুমে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। এর আধা ঘণ্টা পর খালেদা জিয়াকে কড়া পুলিশি পাহারায় কারাগারে নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি চার আসামি হলেন সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।