জীবাণুমুক্ত পরিবেশই শিশুদের ক্যান্সারের কারণ?
ক্যান্সার শুধু বয়স্ক মানুষেরই হয়, এমন ধারণা ভেঙে দিয়ে আজকাল বাচ্চাদেরও ক্যান্সারের খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে।
বিশেষ করে লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার। বলা হয়, প্রতি ২ হাজার শিশুর মধ্যে একজন এ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু শিশুদের ক্যান্সারের কারণ নিয়ে সম্প্রতি এমন একটি গবেষণা প্রতিবেদন বেরিয়েছে যার বক্তব্য অত্যন্ত নাটকীয়।
রিপোর্টটি আধুনিক যুগের অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিশুদের বড় হওয়ার সঙ্গে ক্যান্সারের এক যোগসূত্র আবিষ্কার করেছে। যুক্তরাজ্যের একজন নেতৃস্থানীয় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেল গ্রিভস বলছেন, আধুনিক যুগের জীবাণুমুক্ত জীবন শিশুদের লিউকেমিয়ার একটি কারণ।
ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের এই বিজ্ঞানী বলছেন, ৩০ বছরের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার যদি শিশু বয়েসে যথেষ্ট পরিমাণে জীবাণু মোকাবিলার অভিজ্ঞতা না হয়, তাহলে তা দেহে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।
একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া নামের যে ব্লাড ক্যান্সার; তা প্রধানত উন্নত এবং ধনী সমাজগুলোয় দেখা যায় – যার অর্থ হলো আধুনিক জীবনযাপনের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে।
অতীতে ক্যান্সার কারণ হিসেবে বিচিত্র সব তত্ত্ব দেয়া হয়েছে; যার মধ্যে বৈদ্যুতিক কেবল, তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ, এবং রাসায়নিক পদার্থকে ক্যান্সার কারণ বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সবশেষ এই জরিপে এসব তত্ত্ব নাকচ করে দেয়া হয়।
অধ্যাপক গ্রিভস বলছেন, এ গবেষণায় আমরা জোরালো আভাস পাচ্ছি যে লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার একটা বায়োলজিক্যাল কারণ আছে এবং কোন শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য যথাযথভাবে তৈরি না হয়ে থাকে। তাহলে তার দেহে লিউকেমিয়া দেখা দিতে পারে।
ইতালির মিলানে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার পর সাতটি শিশুর লিউকেমিয়া দেখা দেয়। যেসব শিশু নার্সারিতে গেছে, বা যাদের বড় ভাই-বোন আছে – তাদের মধ্যে লিউকেমিয়ার হার কম। যে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খায় তা লিউকেমিয়া ঠেকাতে সহায়ক। কারণ এর ফলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়।
যে শিশুরা যোনিপথ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছে তাদের মধ্যে লিউকেমিয়ার হার কম। কারণ তারা মায়ের দেহ থেকে অণুজীব পেয়েছে বেশি। যাদের সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম হয়েছে তাদের তুলনায়। যে প্রাণীরা মাইক্রোব বা অণুজীব-বিহীন পরিবেশে জন্ম নিয়েছে তাদের কোন কোন সংক্রমণ হলে তা লিউকেমিয়ার সৃষ্টি করেছে।
প্রফেসর গ্রিভস বলছেন, এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিভাবকদের লিউকেমিয়ার জন্য দোষ দেয়া হচ্ছে। বরং তিনি বলছেন, শিশুদের বাবা-মায়ের উচিত হবে সাধারণ সংক্রমণ নিয়ে বেশি চিন্তিত না হওয়া, অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করতে দেয়া – যাতে তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নানা রকম অণুজীবের সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণ পায়।
তিনি বলেন, তারা দেখেছেন যে শিশুদের রক্তের ক্যান্সারের তিনটি পর্ব আছে।
>>শিশুরা যথন মাতৃগর্ভে থাকে তখনই তার দেহকোষের এমন একটা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে যা থামানো যায় না।
>>জন্মের পর প্রথম বছরে শিশু যদি বিভিন্ন অণুজীবের সংস্পর্শে না আসে – তাহলে তার রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপযুক্ত ‘প্রশিক্ষণ’ হয় না যে কিভাবে এসব হুমকির মোকাবিলা করতে হবে।
>>এর ফলে শৈশবেই তার দেহে এমন কোন একটা সংক্রমণ হতে পারে যার ফলে তার রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করবে না, এবং লিউকেমিয়া দেখা দেবে। বিবিসি বাংলা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন