জুলাই বিপ্লব- ‘ছেলে মারা গেছে, আর কখনো বলবে না, বিকাশে টাকা পাঠালাম’

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবি গ্রামের প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলাম ও মা রেজিয়া বেগমের ছেলে সুজন ইসলাম। নিহত সুজনের তিন বোন। সবার বিয়ে হয়েছে। ৫ আগষ্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার-১ বছর। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত সুজনের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা, ওসি মাহমুূুদুন নবীসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে দেখা গেছে। তবে কোন ছাত্র সংঘটনের নেতৃবৃন্দকে ওইসময় দেখা যায়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগষ্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুজন ইসলাম। এইচএসসি পাশ করে সংসারের হাল ধরতে ঢাকার সাভারের জিরাবো এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকুরী নেন সুজন ইসলাম (২৪)। চাকুরী থেকে যে টাকা উপার্জন করতেন, আয়ের টাকা থেকে বাড়িভাড়া, খাওয়া ও পকেট খরচ রেখে যে টাকা অবশিষ্ট থাকতো সেখান থেকে ৫ হতে ৬ হাজার টাকা বিকাশে বাড়িতে পাঠাতো। তাঁর আয়েই প্রতিবন্ধী বাবা ও মায়ের কোনমতে চলছিলো। ছেলে বড় হবে, মস্ত বড়ো চাকুরী করবে।সংসারে দু:খ ঘুচাবে।আরাম আয়াশে চলবে সংসার ও পরিবারের খরচ। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না।এরই মধ্যে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন সুজন ইসলাম। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শহিদুল ইসলাম। কীভাবে সংসার চালাবেন, ভেবে পাচ্ছেনা তাঁর মা বাবা। ৫ আগষ্ট ঢাকার আশুলিয়ায় বিজয় মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুজন ইসলাম। দীর্ঘ সময় ধরে রুমে না ফেরায় রুমমেট ফুফাতো ভাই মোস্তফা মিয়া তাঁকে খুঁজতে গিয়ে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গিয়ে তাঁর মরদেহ খুঁজে পান। সেখান থেকে ৬ আগষ্ট লাশ তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ওইদিন বাদ আছর গ্রামের বাড়ি পশ্চিম সারডুবিতে নামাজে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।সেসময় ময়নাতদন্ত না হওয়ায় ৫ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের কাজ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আবারো লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করা হয়।
সুজন ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৪ শতাংশ জমিতে জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি। তাঁর মা বাবা সেখানেই বসবাস করছেন।বাড়ির পূর্ব পাশে নিহত সুজনের কবর। যাতায়াতের রাস্তা নেই।গলি দিয়ে যেতে হয় তাঁর বাড়িতে। সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছে ৫ লক্ষাধিক টাকা। সেই টাকা থেকে তাঁর ছোট বোনের যৌতুকের টাকা ও ঋণের টাকা পরিশোধ করে যে অর্থ ছিলো তা দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে ওই জমিতে চাষাবাদ করছে।
মোস্তফা মিয়া বলেন, সুজন আমার মামাতো ভাই ও রুমমেট ছিলো। একসঙ্গে থাকতাম এবং আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করতাম। ঘটনার দিন সুজন ৫ আগষ্ট বিজয় মিছিলে বের হয়ে আর বাসায় ফিরেনি। রুমে না ফেরায় তাঁকে খুঁজতে বের হই। খুঁজতে বের হয়ে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গিয়ে তাঁর লাশ শনাক্ত করি। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে যাই।
ছেলের কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রেজিয়া বেগম।বললেন, “ছেলে মারা গেছে, আর কখনো বলবেনা, বিকাশে টাকা পাঠালাম।” তিনি আরো বলেন, “আমার ছেলের খুনিদের বিচার দ্রুত করতে হবে। আমি যেন চোখে সেই বিচার দেখে যেতে চাই।”
সুজনের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, “পুলিশের গুলিতে ছেলে মারা গেছে।” তিনি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ।” চাষাবাদের কোন জমি ছিল না।সরকারের বরাদ্দের টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করে খাচ্ছি। কিন্তু ছেলেকে আর কোনদিনেও ফিরে পাবো না। ছেলের স্মৃতি আজো চোখে ভাসে।”
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিহত সুজনের পরিবারের বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।তাঁদের পরিবারের জন্য করণীয় সবকিছু করা হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন