জোট গড়া আর ভাঙার ‘কারিগর’ এরশাদ
নির্বাচনে অংশ নিতে আবার জোট গঠনের ঘোষণা দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার জোট গঠন এটাই প্রথম নয়। এর আগেও দুবার তিনি জোটে ভিড়েছেন, কখনো কয়েক মাসের মধ্যে কখনো বা কয়েক বছরের মধ্যে জোট ছেড়েছেন।
এই জোটে অংশগ্রহণ আর জোট ত্যাগের ঘটনায় জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে, দল ভেঙে হয়েছে টুকরো টুকরো। ফলে যা-ও বা কিছু শক্তি ও জনসমর্থন ছিল, এখন নেই তা-ও।
তবে এই দুটি জোটের কোনোটিতেই এরশাদ প্রধান নেতা ছিলেন না। এর মধ্যে রবিবার ৫৮ দলীয় যে জোটের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, তাতে জোটপ্রধান এরশাদই। আর দলের নেতারা বলছেন, এখন জোট নেতা হওয়ায় এরশাদ নিজে থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ফলে আগের মতো পরিস্থিতি আর হবে না।
১৯৮১ সালে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় আসার পর নিজ দল জাতীয় পার্টি গঠন করেন এরশাদ। নয় বছর পর গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর জাতীয় পার্টি আবার আলোচনায় আসে ১৯৯৯ সালে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে। আওয়ামী লীগবিরোধী জোট হিসেবে গঠন করার সময় তখন বলা হয়, একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন এবং একসঙ্গে সরকার গঠনের কথা।
কিন্তু ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ওই জোট গঠন করা হলেও নির্বাচনের আগেই তা ভেঙে যায়। জোট থেকে বের হয়ে যান এরশাদ। যদিও তার সিদ্ধান্ত না মেনে দল ভেঙে একাংশ থেকে যায় জোটে। আর নাজিউর রহমান মঞ্জুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নামে দলের একটি অংশ গঠন করে আলাদা দল। এখনো বিজেপি নামে দলটি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ আছে।
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতবিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে যোগ দেয় জাতীয় পার্টি। ২০০৭ সালের জানুয়ারির বাতিল হয়ে যাওয়া নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও তারা নেয় জোটের সিদ্ধান্ত হিসেবে। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন তারা করে মহাজোটের শরিক হিসেবেই।
কিন্তু এই জোটও ভেঙে যায় পাঁচ বছরের মধ্যে। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে মহাজোট থেকে বের হয়ে আসেন এরশাদ। রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে এরশাদও নানা ডিগবাজি দেন ওই সময়ে। একবার নির্বাচনে যাওয়া এবং একবার না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নাটকীয়তা তৈরি করেন তিনি। পরে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ভোটের দিন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আছে কি নেই- এ নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে ছিল দেশবাসী। তবে নির্বাচনের পর এরশাদকে ছাড়া জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। আর শপথ নেবেন না বলেও শেষ পর্যন্ত শপথ নেন এরশাদ।
বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিই। তবে তারা আবার আছে সরকারেও। যদিও এরশাদ একাধিকবার সরকার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু তার দলের সদস্যরা মন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না।
এর মধ্যে এরশাদ প্রকৃত বিরোধী দল হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজেই জোট গঠনে উদ্যোগী হন। তার দাবি, দেশের মানুষ তার নেতৃত্বে সরকারের জন্য মুখিয়ে আছে। আর কয়েক মাসের চেষ্টার পর রবিবার জোটের ঘোষণা আসে।
এই জোট কত দিন টিকবে- জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের জোট গঠনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই জোট করেছি আমরা। আমি মনে করি এই জোট ভাঙবে না, বরং আরও শক্তিশালী হবে। নির্বাচনের আগে আরও নতুন নতুন দল এই জোটে অংশ নেবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন