ঝালকাঠির কাঠালিয়া অটো চালক হত্যা ঘটনায় নারী সহ ৪ জন গ্রেফতার

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় অটো চালক হত্যার ঘটনায় জড়িত নারী সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে কাঠালিয়া থানার পুলিশ।

উল্লেখ্য ২৯ এপ্রিল সোমবার কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা এলাকার চড়াইল বলতলা সড়কের পাশ থেকে কাওসার হাওলাদার (২২) নামে এক অটোরিকশা চালকের লাশ উদ্ধার করেছিলেন কাঠালিয়া থানার পুলিশ।

নিহত কাওসার হাওলাদার পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের রাজপাশা গ্রামের রিকশাচালক মো. কালাম হাওলাদারের ছেলে। এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানা একটি এজাহার দায়ের করেছিলেন বাদীর পিতা কালাম।

এজাহার সূত্রে পাওয়া যায়, ২৮ এপ্রিল সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় বাদীর ছেলে কাওছার হাওলাদার প্রতিদিনের ন্যায় অটো রিক্সার গ্যারেজ থেকে অটো রিক্সা চালানোর জন্য বের হয়ে যায়। একই তারিখ দুপুর অনুমান ০২.৩০ ঘটিকার সময় বাড়িতে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে পূনরায় অটো রিক্সা নিয়ে বের হয়।

এরপর একই তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.১৫ ঘটিকার সময় অটো রিক্সা নিয়ে বাড়ির সামনে থাকা গ্যারেজে এসে তার থাকার রুমে প্রবেশ করে শরবত তৈরি করে খেয়ে পূনরায় অটো রিক্সা নিয়ে ভান্ডারিয়া শহরের দিকে যায়। রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় স্থানীয় ধাওয়া বাজারে বাদীর সাথে তার ছেলের দেখা হয়।

বাদী তাহার ছেলেকে কোথায় যাবে জিজ্ঞাসা করিলে সে ভান্ডারিয়া যাবে বলিয়া জানায়। রাত অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় বাদী বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষে প্রতিদিনের ন্যায় ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারে তাহার ছেলে কাওছার রাতে বাড়িতে ফিরে আসে নাই। গ্যারেজে গিয়ে দেখে গ্যারেজে অটো রিক্সাও নাই তাহার ছেলেও নাই।

পরবর্তীতে বাদী ও তার আত্মীয়স্বজন তাহার ছেলের ব্যাবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধীকবার ফোন করে। একপর্যায়ে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ বাদীর ছেলের মোবাইল রিসিভ করে জানায় কাঠালিয়া থানাধীন শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা সাকিনস্থ রাধানগর থেকে চড়াইল গামী রাস্তার পাশে এক যুবকের লাশ পড়ে আছে এবং এই মোবাইল ফোনটি তার প্যান্টের পকেটে পাওয়া গেছে। তখন বাদী ও তার আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলেকে সনাক্ত করে।

কাঠালিয়া থানার এসআই মোঃ কাইয়ুম বাহাদুর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। বাদী অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করিলে অফিসার ইনচার্জ অত্র মামলা রুজু করিয়া তদন্তভার এসআই মোঃ কাইয়ুম বাহাদুর এর উপর অপন করেন।

অত্র মামলার সন্দিগ্ধ আসামি মোঃ মাসুম হাওলাদার এর সিডিআর প্রাপ্ত হয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় আসামী মাসুম হাওলাদার এক নারীর সঙ্গে ঘটনার কয়েকমাস পূর্ব থেকে দীর্ঘ সময় কথা বলতেন। গোপন সূত্রে জানা যায় আসামী উক্ত নারীর সাথে পরকিয়ায় মত্ত্ব হয়ে তাকে পাওয়া ও বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে ওঠে।

কিন্তু উক্ত নারী তার সাথে প্রেমের নামে প্রতারণা করে তার নিকট থেকে আর্থিক লাভবান হওয়া শেষে তার নিকট থেকে সরে পড়ে। অপর দিকে ডিসিস্ট কাছার হাওলাদার এর সিডিআর পর্যালোচনায় দেখা যায় ডিসিস্ট এর সাথেও ওই একই নারীর সাথে ঘটনার কয়েকমাস পূর্ব থেকে দীর্ঘ সময় কথা বলে। গোপন সূত্রে জানা যায় মামলার ডিসিস্ট কাওছার হাওলাদার ও উক্ত নারীর মিথ্যা প্রেমের ফাদে মত্ত্ব হয়ে তাকে পাওয়া ও বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে ওঠে।

উক্ত নারী ডিসিস্ট কাওছার হাওলাদার এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখা অবস্থাতেই আসামী মাসুম হাওলাদারকে প্রত্যাক্ষান করে। ফলে ঘটনাক্রমে মাসুম হাওলাদার ও কাওছার হাওলাদার এর মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। উক্ত ঘটনায় ক্রমান্বয়ে মামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের মুল পরিকল্পনা কারী ভান্ডারিয়া থানার রাজপাশা গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে মাসুম বিল্লাহ নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে লাশের সুরতহাল করতে সহযোগিতা করে ও লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল ঝালকাঠির মর্গে নিয়ে যায়। ২ মে তাকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হইয়াছে।

আসামি নিজের দোষ স্বীকার করেছে, আরো ৩ জন সহ পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মৃত কাওছার হাওলাদার কে হত্যা করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ভান্ডারিয়া থানার হালিম হাওলাদার এর ছেলে মেহেদী(২১), পিরোজপুর থানা + জেলার চরপুকুরিয়া গ্রামের মৃত শাহজাহান খন্দকার এর ছেলে মোঃ আলী (২৪) এবং মুক্তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছেন কাঠালিয়া থানার পুলিশ।