টাকার যোগান দিতে সিদ্ধান্ত পাল্টালো বাংলাদেশ ব্যাংক
হঠাৎ করেই আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে যায় দেশের বণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ঋণসীমা ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) এর হার কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য আগামী জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। ফলে ব্যাংকগুলোকে নতুন করে আমানত বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।
নতুন নির্দেশনা পালন করতে হলে, ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করতে হবে। এতে আমানতের বিপরীতে সুদ বাড়িয়ে দিয়ে তা সংগ্রহে নেমে পড়েন ব্যাংকাররা। ফলে নগদ টাকার সংকট ও আমানতের সুদ হার বেড়ে যায়। বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যা ব্যবসায়ীদের ভাবিয়ে তোলে।
পরে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের চাপে আগের অবস্থান থেক সড়ে আসলো বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, আগামী জুন মাসে নয়, চলতি বছরের বাকি পুরোটা সময় পাবে ব্যাংকগুলো। এতে ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোর আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণের সীমা সমন্বয়ের সুযোগ পাবে।
২০ ফেব্রুয়ারি নেয়া এমন সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকল ব্যাংককে অবহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন ঋণসীমা পরিপালনের সময়সীমা ৩০ জুনের পরিবর্তে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে গত ৩০ জানুয়ারি বা তার আগে গ্রাহককে দেয়া কোনো প্রতিশ্রুতি (কমিটমেন্ট) ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরাসরি ঋণে (ফান্ডেড) পরিণত হওয়ার কারণে ঋণসীমা বেড়ে গেলেও তা নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে এ ক্ষেত্রেও ঋণ আমানত হার ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি এক ব্যাংকের এমডি বলেন, এর ফলে ব্যাংকগুলোতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, তা নিরসন হবে। ব্যাংকগুলো ঋণসীমা সমন্বয়ে যথেষ্ট সময় পেল। ফলে সুদহার বাড়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল, তা কিছুটা কমবে।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে ৮৫ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত। গত ৩০ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ইসলামি ধারার ব্যাংক আগে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৯০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত, নতুন নির্দেশনায় যা ৮৯ টাকা করা হয়। যেসব ব্যাংকের ঋণ নতুন সীমার বেশি রয়েছে, তারা তা সমন্বয় করতে পাঁচ মাসের মতো সময় পেয়েছিল।
এই অল্প সময়ের কারণে ঋণ আদায় ও নতুন আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো অর্থ সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছু ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৯ শতাংশে উন্নীত করে। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সরকারি অনেক সংস্থাও বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়া শুরু করে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংক (ফারমার্স) খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। বেসরকারি ব্যাংক থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ আতঙ্ক আগে শেয়ারবাজারে ছিল, এখন ব্যাংকে চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ চান গভর্নর।
গভর্নর বলেন, আমদানি যে হারে বাড়ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় সে হারে আসছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বেড়েছে। দাম বেড়ে গেছে। চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গভর্নর বলেন, ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ৩৮ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমার নিচেই আছে। অযথাই বলা হচ্ছে, ঋণসীমা সমন্বয়ের কারণে বড় প্রভাব পড়বে। নতুন নিয়মের ফলে ১১ হাজার কোটি টাকার আমানত লাগবে। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ কৃষি, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকেরই ৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি বেসরকারি ১৫ ব্যাংকের লাগবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আগ্রাসী ঋণ বিতরণ বন্ধ, ঋণের মান ভালো ও ঋণশৃঙ্খলা নিশ্চিতে ঋণসীমা কমানো হয়েছে। আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে, এটা আমানতকারীদের জন্য ভালো। তবে ঋণের সুদহার বাড়াটা ভালো নয়। এটা স্বল্প সময়েই ঠিক হয়ে যাবে।
পরিস্থিতি সামলাতে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তব্য দেয়ায় এ নিয়ে পুরো খাতে একধরনের আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এরপরই আগের অবস্থান থেকে পিছু হটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন